পুয়ের্তো রিকোর দারিয়াল ক্রুজকে অলিম্পিক্সে পুরুষদের ৫৭কেজি বিভাগের কুস্তির ব্রোঞ্জ মেডেল ম্যাচে হারিয়ে দেশকে পদক এনে দিয়েছেন ২১ বছর বয়সী হরিয়ানার ছেলে আমন শেরাওয়াত। ২০১৮ সালে বিশ্ব ক্যাডেট চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জি জিতে বুঝিয়েছিলেন ব্যাপক প্রতিভা রয়েছে তাঁর মধ্যে। এরপর ২০২২ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ এবং অনূর্ধ্ব ২৩ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে আমন বুঝিয়ে দেন আগামী দিনে অলিম্পিক্সেও তিনি ভারতের পদক জয়ের দাবিদার।
আরও পড়ুন-ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুখবর! চোট কাটিয়ে আগামী মাসেই বাংলাদেশ সিরিজে ফিরছেন শামি…
মাত্র ১০ বছর বয়সেই হারিয়েছেন মাকে। একবছর পরই অনাথ হয়ে যান, নিজের স্ত্রীর মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে প্রয়াত হন তাঁর বাবাও। আজকে তাঁরা থাকলে ছেলের এই জয় দেখে সত্যি উচ্ছসিত হতেন, গর্বে বুক ফুলে উঠত। কিন্তু তাঁরা নেই, তাই অলিম্পিক্সে পদক জয়ের পরও মন ভারাক্রান্ত আমনের। তিনি বললেন, ‘এই পদকটা আমার মা-বাবার জন্য। তাঁরা জানেও না যে আমি কুস্তিগির হয়ে গেছি। তখন আমিও জানতাম না অলিম্পিক্স বলে হয়ত কিছু হয়। আমি দু'রাত ঘুমোতে পারিনি, চেয়েছিলাম সোনা জিততে কিন্তু পারিনি। পরের বার নিশ্চয় চেষ্টা করব দেশকে গর্বিত করার এবং সোনা নিয়ে ফেরার’।
ম্যাচের কয়েক ঘন্টা আগেও বেড়ে গেছিল প্রায় ১.৫ কেজি ওজন, কিন্তু ভিনেশের মতো সমস্যা হয়নি তাঁর। বরং তাঁর কোচ বীরন্দ্র দাহিয়া বলছেন, ‘বিষয়টি একদমই সাধারণ। রাত সাড়ে বারোটা অবদি ম্যাট ট্রেনিং করার পর ভোর চারটে পর্যন্ত শরীরচর্চা করে তাঁর ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে, এরপর ও ঘুমোতে যায়। সকালে ৭.১৫ নাগাদ ওজন মাপার পর দেখা যায় নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে, এরপর ব্রেকফাস্ট করে আমন’।
আরও পড়ুন-ইউরোর পর অলিম্পিক্সে সোনা জয় স্পেনের! ফ্রান্সকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে ৩২ বছর পর সোনা' জয়…
১২ বছর বয়স পর্যন্ত নিজের কাকার সঙ্গে থাকার পর ছত্রশলে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। সেখানেই কুস্তিতে হাতে খড়ি হয় আমনের। তখনও ছোট্ট আমনের পারফরমেন্স দেখে নয়, বরং সমবেদনার কারণেই ভর্তি নেওয়া হয়েছিল অ্যাকাডেমিতে। লাজুক বাপ-মা হারা ছেলেটি ছিল বয়সের তুলনায় কম ওজনের। দুবেলা ঠিকঠাক না খেলে যা হয় আরকি। কিন্তু সেখানে এসেই বদলে যায় আমনের জীবন। হাঁস যেমন জল ছাড়া থাকতে পারে না, তেমন আমনও কুস্তিকে ছাড়া এক মূহূর্তে থাকতে পারত না।
সকাল বেলা সূর্য ওঠার আগেই ছোট্ট আমন গুম থেকে উঠে প্রস্তুত হয়ে যেত অনুশীলনের। গাছে লাগানো দড়ি দিয়ে করতে অনুশীলন। এরপর মাটির মধ্যে অনুশীলনের পাশাপাশি ম্যাটেও নিজেকে রপ্ত করতেন বড় মঞ্চের প্রস্তুতিতে। কুস্তিই তখন তাঁর ধ্যান জ্ঞান এবং এতমাত্র তপস্যা হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন-‘তুমি সত্যি স্পেশাল! সর্বকালের সেরা ভারতীয় ক্রীড়াবিদ!’ নীরজকে নিয়ে বার্তা সিন্ধুর
ছত্রশল থেকেই ভারতীয় কুস্তির তারকারা উঠে এসেছেন। সেখান থেকে উঠে এসে ভারতকে অলিম্পিক্সে পদক জিতিয়েছেন সুশীল কুমার, যোগেশ্বর দত্ত, বজরং পুনিয়া, রবি দাহিয়ারা। এখানে একের পর এক তরুণ প্রতিভাবান কুস্তিগিররা থাকায় লড়াই কঠিন হয়। ফলে এখান থেকে যারা বেরোন, তাঁরা বিশ্বের সব দেশের কুস্তিগিরদের সঙ্গেই লড়তে প্রস্তুত থাকেন। সেখান থেকেই উঠে এসে আজ আমন ভারতের নাম উজ্জ্বল করল, সঙ্গে প্রতিজ্ঞাও করল আগামী অলিম্পিক্সে আরও ভালো পারফরমন্স করার।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।