মহেন্দ্র সিং ধোনির সবচেয়ে বড় গুণগুলির মধ্যে একটি হল, তিনি ভালো করে জানতেন, কোথায় লাগাম টানতে হবে! কোন সময়ে কোন পদক্ষের সঠিক হবে, সেটা ভালো করেই জানতে মাহি। তিনি ভালো ছন্দে থাকার সময়েই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২০১৪-১৫ সালে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরের সময়ে হঠাৎ সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচের আগে বিরাট কোহলির হাতে লাগাম হস্তান্তর করেন। তিনি জানতেন, লাল বলের ক্রিকেটে ভারতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোহলিই সঠিক মানুষ। সেই সফরের অ্যাডিলেডের প্রথম টেস্টে ধোনি না খেলায়, কোহলিই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এবং সেই সময়ে বিরাটের ইতিবাচক মানসিকতা এবং নেতৃত্বের দক্ষতা সকলের চোখেই পড়েছিল।
ভারতের প্রাক্তন ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধর নিজের আত্মজীবনী ‘কোচিং বিয়ন্ড: মাই ডেজ উইথ দ্য ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিম’-এ ধোনি-কোহলির মধ্যে সেই সিরিজেই বিবাদের একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেছেন। শ্রীধর সেই সময়ে ভারতের সাপোর্ট স্টাফের সদস্য ছিলেন।
আরও পড়ুন: 2023 WC-এর জন্য আমি যুজি নয়,কুলদীপকে দলে রাখব- কেন এমন দাবি প্রাক্তন নির্বাচকের?
সেই সিরিজের প্রথম টেস্টের শেষ দিনে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩৬৪ রান। বিরাট সেই রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে চেয়েছিলেন। কিন্তু ধোনি তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন যে, দলের শক্তি বুঝে খেলতে হবে। বিরাট শোনেননি। ভারত ম্যাচটি হেরে গিয়েছিলেব ৪৮ রানে। কী কথা হয়েছিল ধোনি-কোহলির মধ্যে?
শ্রীধর লিখেছেন, চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার পর, বিরাট কোহলি পরের দিনের পরিকল্পনা তৈরি করছিলেন, তখন তার মনে ম্যাচ ড্র করার পরিকল্পনা ছিল না। জিততে চেয়েছিলেন কোহলি। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে যখন টিম ইন্ডিয়া হোটেলে ফিরছিল, তখন কোহলি এবং ধোনির মধ্যে কথোপকথন হয়। যেটা নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন শ্রীধর।
শ্রীধর তাঁর বইয়ে লিখেছেন যে, ‘বিরাট ড্রয়ের জন্য খেলতে রাজি ছিল না। ও ম্যাচটা জিততে চাইছিল। দলকে ও বলেছিল জয়ের জন্য খেলতে। শেষ দিনে ৩৬৪ রান তাড়া করতে হত আমাদের। পরে বিরাট আমাকে বলে যে, পঞ্চম দিনে মাঠে যাওয়ার সময় ধোনি ওর সঙ্গে কথা বলে। ধোনি বলেছিল যে, আমি জানি তুমি এই রান তাড়া করতে পারবে। সেই ক্ষমতা তোমার আছে। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে তোমায় মাথায় রাখতে হবে যে, দল পারবে কি না! দলে যে ব্যাটাররা রয়েছে, তারা এই রান তাড়া করতে পারবে কি না! তা-ও আবার টেস্টের শেষ দিনে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় দলের শক্তির কথা মাথায় রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন: একানার পিচ নিয়ে ক্ষোভ, চাকরি গেল পিচ কিউরেটরের
বিরাট নিজের আগ্রাসী মানসিকতা নিয়েই উত্তর দিয়েছিলেন ধোনিকে। শ্রীধর তাঁর বইতে লিখেছেন, ‘বিরাট বলেছিল যে, ধোনির কথায় যুক্তি ছিল। কিন্তু আমাদের ইতিবাচক ভাবতে হবে। ধোনিকে ও বলেছিল, আমরা চেষ্টা করলে তবেই তো বুঝব যে পারি কি না। বিরাট চেষ্টা করে দেখতে চেয়েছিল। ও মনে করত আমরা তো যদি চেষ্টা না করি, তা হলে বুঝব কী করে যে আদৌ আমরা কাজটা পারি কি না।’
প্রসঙ্গত ৩৬৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে, টিম ইন্ডিয়া শেষ দিনে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে। কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিল ভারত সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। কিন্তু নাথান লিয়ন ভারতের স্বপ্নে জল ঢেলে দেন। ম্যাচের শেষ দিন ভারত ২ উইকেটে ২৪২ করে ফেলেছিল। কিন্তু নাথান লিয়ন দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট নিয়ে ভারতকে গুড়িয়ে দেয়। ৪৮ রানে ম্যাচটি হেরে যায় টিম ইন্ডিয়া। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করেন, মুরলি বিজয় ৯৯ রানে আউট হন। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।