ভারতের প্রাক্তন ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধরের সম্প্রতি প্রকাশিত বই ‘কোচিং বিয়ন্ড: মাই ডেজ উইথ দ্য ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিম’-এ প্রচুর অজানা তথ্য, চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা রয়েছে। যে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ক্রিকেট মহল জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ভারতীয় ড্রেসিংরুমের চাপানউতোর, খুঁটিনাটি সবটাই প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। তার মধ্যে একটি হল, মহেন্দ্র সিং ধোনির উপর মারাত্মক ভাবে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রবি শাস্ত্রী। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজের সময় ধোনির মন্থর ইনিংসের জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে হয়েছিলেন শাস্ত্রী।
ভারত একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড সফর করেছিল। যার মধ্যে তিনটি টি-টোয়েন্টি, তিনটি ওডিআই এবং পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ছিল। টি-টোয়েন্টিতে ২-১ ব্যবধানে জেতার পর, ভারত প্রথম ওডিআই ম্যাচেও জয়ের গতি বজায় রাখে।২৬৯ রান তাড়া করতে নেমে আট উইকেটে জিতেছিল। যাই হোক বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন দল দ্বিতীয় খেলায় ৮৬ রানের বড় ব্যবধানে হারে।
সেই ম্যাচে হারের প্রসঙ্গ টেনে শ্রীধর লিখেছেন যে, রবি শাস্ত্রী হারের ব্যবধান বা ফলাফল নিয়ে কম চিন্তা করেছিলেন। আর রান তাড়া করতে নেমে ধোনির কৌশল নিয়ে একটু বেশিই ক্ষিপ্ত ছিলেন। ৩২৩-এর লক্ষ্য দিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচে জো রুট অপরাজিত ১১৩ রান করেছিলেন। ভারত সেই রান তাড়া করতে নেমে ২৩৬ রানে অল আউট হয়ে যায় ভরত।
আরও পড়ুন: পেসাররা মাত্র ৩০ বল করে- বুমরাহদের এত চোটের পিছনে আসল কারণ ফাঁস করলেন কপিল
বিরাট কোহলি আর সুরেশ রায়না মিলে ৮০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে। রায়নার ৪৭, কোহলির ৪৬ কিছুটা অক্সিজেন দিয়েছিল। কিন্তু কোহলি আউট হয়ে যাওয়ার পর মহেন্দ্র সিং ধোনি ক্রিজে আসেন। তখন জিততে হলে ভারতকে করতে হবে ১৮৩ রান। কিন্তু এর পর থেকে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে। ধোনি নিজেও ৫৯ বলে ৩৭ করে আউট হয়ে যান।
শ্রীধর লিখেছেন, ‘বিরাট এবং সুরেশ রায়না যখন ব্যাটিং করছিলেন, তখনও আমরা জয়ের আশা করছিবাম। তবে যেহেতু আমাদের উইকেট পড়তে থাকে, এমএস-এর আউট হয়ে গেলে শেষ ১০ ওভারে ব্যাটিং করার জন্য শুধুমাত্র বোলারই ছিল। আর সেই ১০ ওভারে আমাদের প্রয়োজনীয় রানরেট ছিল ১৩ প্রতি ওভারে। আমরা পরের ছয় ওভারে মাত্র ২০ রান করতে পেরেছিলাম। এটি সেই ইনিংসে যখন এমএস ১০.০০০ ওডিআই রানের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। আমরা সবাই ওর জন্য রোমাঞ্চিত ছিলাম। তবে আমরা এটাও জানতে চেয়েছিলাম, কেন তিনি লক্ষ্যে পৌঁছতে সেই ভাবে চেষ্টাই করেননি।’
৪৭তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ধোনি ৫৯ বলে মাত্র দুই বাউন্ডারি মেরে ৩৭ রান করেছিলেন। ভারত শেষ পর্যন্ত ২৩৬ রানে গুটিয়ে যায়। শ্রীধর প্রকাশ করেছেন যে, রবি শাস্ত্রী হারের বিষয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন না বরং ধোনির খেলার কৌশলে হতাশ হয়েছিলেন। শ্রীধর তার পর সিরিজের শেষ ম্যাচের আগে হেডিংলিতে ড্রেসিং-রুমের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: IND vs NZ 3rd ODI-এর আগেই পন্তের আরোগ্য কামনায় মহাকাল মন্দিরে পুজো দিলেন সূর্যরা
টিম মিটিংয়ে রবি ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু বললেও, সেটা আসলে ধোনিকেই বলা হয়েছিল, ‘আমরা ৮৬ রানে হেরেছি বলে রবি ক্ষিপ্ত ছিল না, কিন্তু আমরা কী ভাবে খেলে হেরেছি, কী ভাবে লড়াই না করেই, হার স্বীকার করেছি, সেটাই আসল ছিল। আমরা লক্ষ্যের কাছাকাছি যাইনি, একটা ধাক্কাও দিতে পারিনি, ম্যাচটা সহজে হেরে গিয়েছিলাম। আর এর জন্য প্রধান কোচ যে সহজেই কিছু না বলে ছেড়ে দেবেন, এমনটা ছিল না।’
শ্রীধর যোগ করেছেন, ‘নির্ধারক ম্যাচ হেডিংলিতে ছিল। এবং আমরা আগের দিন একটি টিম মিটিং করি। সাপোর্ট স্টাফের সব সদস্য সহ পুরো স্কোয়াড উপস্থিত ছিল, এবং আমি জানতাম রবি ক্ষোভ প্রকাশ করতে চলেছে। ও নিজের উচ্চ এবং ক্ষুব্ধ স্বরে বলেছিল, তুমি যেই হও না কেন, এমন কোনও বিষয় ঘটতে পারে না, যখন আমরা জয়ের চেষ্টা না করে ম্যাচ হেরে বসব। এটা আমার সময়ে হতে পারে না। আর কেউ যদি তা করে, সেটাই হবে শেষ ক্রিকেট ম্যাচ। ক্রিকেট খেলায় হার-জিত আছে। এতে লজ্জার কিছু নেই, কিন্তু এ ভাবে কেন হারবে!’
শ্রীধর উল্লেখ করেছেন যে, রবি শাস্ত্রী সেই পেপটকের মাঝে একবারও ধোনির নাম নেননি। তবে তিনি প্রাক্তন ভারত অধিনায়ককে চোখের ভাষাতেই সবটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর দিকে চোখে চোখ রেখেই সবটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তবে রবি শাস্ত্রীর এই বক্তব্যে অন্য কোনও ক্রিকেটারও বিচলিত হয়ে থাকতে পারে। তবে ধোনি শান্ত ছিলেন এবং তিনি কোচের বক্তব্যকে অনুসরণ করেন।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।