ব্যাট হাতে ৩৬ বলে অপরাজিত ৬৪ রান। তারপর বল হাতে চার ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ইউসুফ পাঠানের সেই অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সের উপর ভর করে উদ্বোধনী রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ জিতল ইন্ডিয়া লেজেন্ডস। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শ্রীলঙ্কা লেজেন্ডসকে ১৪ রানে হারাল সচিন তেন্ডুলকরের দল।
রবিবার ১৮২ রান তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু করে শ্রীলঙ্কা লেজেন্ডস। প্রথম ছ'ওভারেই বিনা উইকেটে ৫৮ রান তুলে ফেলেন তিলকরত্নে দিলশন এবং সনত্ জয়সূর্য। দু'জনকেই দেখে মনে হচ্ছিল, তাঁরা যেন এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। তাঁদের সামনে দিশেহারা লাগছিল ভারতীয় বোলারদের। শেষপর্যন্ত ব্যাটের পর বল হাতেও ভারতের ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান ইউসুফ পাঠান। নিজের দ্বিতীয় বলেই দিলশানকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দেন। ৭.২ ওভারে ৬২ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। পরের ওভারের প্রথম বলেই চামারা সিলভাকে আউট করেন ইউসুফের ভাই ইরফান। ফাইনালে নিজের প্রথম বলেই উইকেট নেন প্রাক্তন অলরাউন্ডার। ছ'বলের ব্যবধানে দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। সেই চাপ সামলে ওঠার আগেই ইউসুফের শিকার হন জয়সূর্য। ৩৫ বলে ৪৩ রান করে শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন ওপেনার ড্রেসিংরুমে ফিরতেই ম্যাচে আরও জাঁকিয়ে বসে ভারত।
কিছুক্ষণ পর অবশ্য প্রতি-আক্রমণের পথে হাঁটেন কৌশাল্য উইরারত্নে এবং চিনথাকা জয়সিংহে। সেই জুটির কারণেই একটা সময় মনে হচ্ছিল, কাজটা কঠিন হলেও রান তাড়া করে নিতে পারে শ্রীলঙ্কা। ততক্ষণে ৩৪ বলে ৬৪ রান জুড়ে ফেলেছেন তাঁরা। কিন্তু মোক্ষম সময় সেই জুটি ভেঙে দেন মনপ্রীত গোনি। তখন জয়ের জন্য আট বলে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। পরে ছ'বলে সেই রানটা দাঁড়ায ২৪। কিন্তু ভারতীয়দের স্নায়ুর চাপ বাড়িয়ে প্রথম বলেই ছক্কা খান মুনাফ প্যাটেল। তারপর অবশ্য আর কোনও বড় শট মারতে দেননি। শেষ দুই বলে জোড়া উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। তার ফলে সাত উইকেটে ১৬৭ রানেই থেমেই যায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
তার আগে সন্ধ্যায় টসে জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা লেজেন্ডস। শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি ইন্ডিয়া লেজেন্ডসের। তৃতীয় ওভারেই রঙ্গনা হেরাথের বলে আউট হয়ে যান বীরেন্দ্র সেহওয়াগ। ১২ বলে ১০ রান করেন তিনি। কিছুক্ষণ পর প্যাভিলিয়নে ফেরেন এস বদ্রীনাথও। সেখান থেকে ইনিংসের হাল ধরেন সচিন এবং যুবরাজ। দু'জনের জুটি যখন জমে উঠেছিল, তখন আউট হয়ে যান অধিনায়ক সচিন। ২৩ বলে ৩০ রান করেন তিনি। তারপর ইউসুফের সঙ্গে মারকাটারি ব্যাটিং শুরু করেন যুবরাজ।
১৫.১ ওভারে বাউন্ডারি মেরে ৩৫ বলে অর্ধশতরান পূরণ করেন প্রাক্তন ভারতীয় অলরাউন্ডার। কম যাননি ইউসুফও। বরং যুবরাজের ব্যাটিং দেখে নিজের পুরনো বিধ্বংসী ফর্মে ফেরেন তিনি। একের পর এক বল বাউন্ডারির বাইরে ফেলতে থাকেন। মাত্র ২৬ বলেই অর্ধশতরান করেন। কিন্তু ১৯ তম প্রথম বলে বড় শট মারতে ডিপ মিড-উইকেটে ধরা পড়েন। ৪১ বলে ৬০ করেন। মারেন চারটি ছক্কা এবং চারটি বাউন্ডারি। সেই জুটিতেই ম্যাচে প্রবলভাবে ফিরে আসে ইন্ডিয়া লেজেন্ডস। চতুর্থ উইকেটে ৪৭ বলে ৮৫ রান যোগ করেন দুই অলরাউন্ডার।
কিন্তু যুবরাজ আউট হওয়ার পর কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলেছিল ইন্ডিয়া লেজেন্ডস। পরের ১১ বলে ১৮ রান ওঠে। তাও শেষ বলে লং-অফের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা মারেন ইউসুফ। তার জেরে ১৮১ রান তোলে টিম ইন্ডিয়া। শেষপর্যন্ত ৩৬ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন ইউসুফ। চারটি বাউন্ডারি এবং পাঁচটি ছক্কা হাঁকান তিনি। আর অন্যদিকে ইরফান পাঠানের অবদান ছিল তিন বলে আট রান।