চোখে জল রজার ফেডেরারের। পিছনে দাঁড়িয়ে চোখের জল সামলানোর চেষ্টা করছেন পেশাদার টেনিস কেরিয়ারে ফেডেরারের সবথেকে বড় ‘শত্রু’ রাফায়েল নাদাল। ‘ফেডাল’-এর সেই বন্ধুত্ব, আবেগের বিস্ফোরণে কেঁদে ফেলল টেনিস দুনিয়াও। নেটিজেনদের মতে, বিশ্বের ক্রীড়া ইতিহাসের অন্যতম সেরা মন খারাপের এবং সেরা মুহূর্ত হয়ে থাকবে এই ফ্রেমটা।
খাতায়কলমে লেভার কাপ চললেও শুক্রবার (স্থানীয় রাতে) লন্ডনের ও'টু এরিনার মঞ্চ তৈরি ছিল ফেডেরারের জন্য। যত আগ্রহ ওই একটা ম্যাচ ঘিরেই। সঙ্গে ছিল আবেগ। পেশাদার টেনিস জীবনের শেষ ম্যাচ খেলতে যখন নাদালের সঙ্গে কোর্টে আসেন ফেডেরার, তখন স্রেফ আবেগের বিস্ফোরণ হয় ও'টু এরিনায়। শুধু তাই নয়, শেষবারের মতো ফেডেরারের ব্যাকহ্যান্ড, ভলি, ফোরহ্যান্ড দেখার আশায় বসেছিলেন বিশ্ববাসীও। যে ফেডেরার ২০২১ সালের উইলম্বডনের কোয়ার্টার-ফাইনালের পরে আর খেলেননি।
তবে পেশাদারি কেরিয়ারের শেষ ম্যাচটা জিতে নিজের সাম্রাজ্যকে বিদায় জানাতে পারেননি ২০ বারের গ্র্যান্ডস্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন ফেডেরার। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর টিম ওয়ার্ল্ডের ফ্রান্সেস টিয়াফো এবং জ্যাক সকের বিরুদ্ধে ৪-৬, ৭-৬ (৭/২), ১১-৯ ব্যবধানে হেরে যান ‘ফেডাল’(ফেডেরার এবং নাদালকে একত্রে বলা হয়)। তবে ম্যাচটা তো জিত-হারের ছিল না, ম্যাচটা ছিল ফেডেরারের, ম্যাচটা ছিল 'ফেডাল'-র। তাই ম্যাচ শেষে সকলের সমর্থন একদিকে ছিল - ফেডেরারের দিকে, 'ফেডাল'-র দিকে।
ফেডেরারও সেই আবেগে বিহ্বল হয়ে ওঠেন। ডাবলস ম্যাচ শেষ হওয়ার পর দর্শকদের অভিবাদন জানানোর সময় কেঁদে ফেলেন 'সুইস সম্রাট'। পেশাদারি টেনিস কেরিয়ারের সবথেকে বড় ‘শুত্রু’-র সেই বিদায় মুহূর্তে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি নাদালও। চোখের জল মুছতে দেখা যায় ২২ টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম তারকাকে। যে দৃশ্য সম্ভবত বিশ্বের যে কোনও খেলার যে কোনও ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’-দের কাছে এক উদাহরণ হয়ে রইল।
পরে কোর্টে সাক্ষাৎকারের সময়ও ফেডেরারের কথায় বিশেষভাবে উল্লেখ ছিল রাফার। পেশাদারি টেনিস সার্কিটে যে দুই তারকার প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ২০০৪ সালে। পরের দুই দশকে একাধিকবার ঐতিহাসিক ম্যাচে খেলেছেন। মোট ৪০ বারের সাক্ষাতে ২৪-১৬ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন নাদাল। সেই নাদালের সঙ্গে জীবনের শেষ ম্যাচের পর অঝোরে কাঁদতে-কাঁদতে বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ফেডেরার বলেন, 'রাফার সঙ্গে একই দলে খেলতে পেরে, সবাইয়ের সামনে, সব কিংবদন্তিরা..ধন্যবাদ।'
সবশেষে আপনাকেও ধন্যবাদ ফেডেরার। আপনার টুইনার, ওয়ান-হ্যান্ডেড ব্যাকহ্যান্ড, অবিশ্বাস্য জায়গা থেকে সব শট না থাকলে টেনিসটা হয়ত শিল্প হত না, এত সুন্দর হত না দুনিয়া। আর ধন্যবাদ 'ফেডাল'-কে। আরও একবার ঠিক প্রমাণ করার জন্য যে ‘ফেডেরার’ না থাকলে ‘নাদাল’ হতেন না, ‘নাদাল’ না থাকলে ‘ফেডেরার’ হতেন না। হয়ত দু'জনের আলাদা যুগের হলে ফেডেরার এবং নাদালের গ্র্যান্ডস্ল্যামের সংখ্যাটা বেশি হত। কিন্তু ‘ফেডেরার’ এবং ‘নাদাল’ হয়ত হতেন না। (বিশেষ দ্রষ্টব্য: শেষ অংশটা হয়ত দরকার ছিল না, কিন্তু ফেডেরার অবসর নিলেন যে)।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।