শূন্য রানে আউট হওয়ায় থাপ্পড় মেরেছিলেন রাজস্থান রয়্যালসের এক মালিক। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা রস টেলর। তাঁর দাবি, তেমন জোরে থাপ্পড় মারা হয়নি। তবে সেটা তিনি নিশ্চিত ছিলেন না, 'পুরোটাই হালকা মেজাজে করা হয়েছে কিনা।' তবে বিষয়টি নিয়ে রাজস্থানের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
stuff.co.nz-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মজীবনী 'ব্ল্যাক অ্যান্ড ওয়াইট'-এ সেই মন্তব্য করেছেন টেলর। তিনি বলেছেন, ‘মোহালিতে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের (বর্তমান পঞ্জাব কিংস) বিরুদ্ধে খেলছিল রাজস্থান। ১৯৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আমি শূন্য রানে এলবিডব্লুউ আউট হয়ে গিয়েছিলাম এবং আমরা (লক্ষ্যমাত্রার) ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেনি।’
২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরে খেলেছিলেন টেলর। ২০১১ সালে রাজস্থানে যোগ দিয়েছিলেন। এক বছর খেলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে (বর্তমানে দিল্লি ক্যাপিটালস) চলে গিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন তারকা। রাজস্থানে এক বছর থাকার সময় সেই অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হয়েছে বলে দাবি করেছেন টেলর।
আরও পড়ুন: ‘তরুণ ক্রিকেটারদের আদর্শ’, কিউয়ি কিংবদন্তি রস টেলরের অবসরে বিশেষ বার্তা সচিনের
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মজীবনীতে টেলর বলেছেন যে ‘হোটেলের একেবারে উপরের ফ্লোরে পানশালায় (পুরো) দল, সাপোর্ট এবং ম্যানেজমেন্ট ছিল। ওয়ার্নির (শেন ওয়ার্ন) সঙ্গে ছিলেন লিজ হার্লি।’ সঙ্গে তিনি বলেন, ‘রয়্যালসের একজন মালিক বলেছিলেন যে রস, শূন্য রানে আউট হবে বলে তোমায় লাখ-লাখ টাকা দিচ্ছি না এবং আমায় তিন বা চারবার মুখে থাপ্পড় মারেন।’
রস টেলরের বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ
ওই আত্মজীবনীতেই নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটে বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ তুলেছেন টেলর। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডে টেলরের আত্মজীবনী 'রস টেলর, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট'-র সারাংশ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে সামোয়া উপজাতির বংশোদ্ভূত টেলর বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডে ক্রিকেট বেশ শ্বেতাঙ্গদের খেলা (হিসেবে বিবেচিত হয়)। কেরিয়ারের অধিকাংশ সময় আমি ব্যতিক্রম হয়ে থেকেছি। ভ্যানিলা (গায়ের রং বোঝাতে) দলের মধ্যে হয়ে থেকেছি বাদামি।’ সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই খেলায় পলিয়েশিয়ান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত কম। সম্ভবত এটাও অবাক করার নয় যে আমায় কখনও কখনও মাউরি বা ভারতীয় হিসেবে মনে করা হয়।’
চলতি বছরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন টেলর। যিনি নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের অন্যতম মুখ হয়ে থেকেছেন। সেই কিংবদন্তি বলেছেন, ‘অনেক দিক থেকেই ড্রেসিংরুমের খুনসুটি থেকেই বিষয়টি বোঝা যেত। একজন সতীর্থ আমায় বলত যে রস, তুমি অর্ধেক ভালো মানুষ। কিন্তু অর্ধেক অংশটা ভালো? আমি কী বলতে চাইছি, তা তুমি জান না। আমি বুঝতাম যে আমি জানতাম। জাতিগত বিষয় নিয়ে অন্যান্য খেলোয়াড়দেরও এরকম মন্তব্যের মুখে পড়তে হত।’
আরও পড়ুন: জীবনের শেষ ম্যাচ! জাতীয় সংগীত শুনে কেঁদে ভাসালেন রস টেলর
কোন সতীর্থ সেই মন্তব্য করেছিলেন, তা প্রকাশ না করলেও টেলর বলেছেন, ‘যে পাকেহারা (শ্বেতাঙ্গ কিউয়ি খেলোয়াড়) সেই মন্তব্য শুনত, তারা ভাবত যে এটা স্রেফ খুনসুটি। কিন্তু সে শ্বেতাঙ্গ হিসেবে ওরা ওই কথাগুলো শুনেছিল। ওর মতো মানুষকে উদ্দেশ্যে সেই মন্তব্য করা হয়নি। তাই কোনও প্রতিরোধের বিষয় ছিল না। কেউ তাকে শুধরে দেয়নি।’ সঙ্গে তিনি বলেন, ‘তখন ভাবতে হত যে তুমি যদি বিষয়টি নিয়ে সরব হও, তাহলে বড় সমস্যা তৈরি করবে ফেলবে বা নখদন্তহীন খুনসুটির বিষয়ে জাতিগত কার্ড খেলার অভিযোগ চাপবে। তাই মোটা চামড়া তৈরি করার কাজটা সহজ মনে হত এবং তা হজম করে যেতে হত। কিন্তু সেটা কি ঠিক?’