সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে চেহারার মিল করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারেনি বলবীর চন্দকে। একই সঙ্গে লকডাউনের বাজারে চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়ার পরে সপরিবারে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন এই সচিনভক্ত।
গত ২১ জুন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ছাড়া পেয়েছেন পঞ্জাবের সাহলোঁ গ্রামের বাসিন্দা চন্দ। তার ১১ দিন আগে তাঁর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে কোভিড পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হন। কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের মতো রোজগার হারিয়ে চন্দও গ্রামে ফিরেছিলেন তার আগে।
কিংবদন্তী ক্রিকেটারের সঙ্গে শারীরিক সাদৃশ্য থাকার দৌলতে একদা মুম্বইয়ের ফুড চেইন ‘গোলি বড়া পাও’-এর ব্র্যান্ড অ্যাম্ব্যাসাডর নিযুক্ত হয়েছিলেন বলবীর চন্দ। দেশের ৯০টি শহরে সংস্থার ৩৫০টি আউটলেটে তাঁর ছবি ব্যবহার করে সুখাদ্যের প্রচার হত সে সময়। টানা ২২ বছর ধরে সচিনের নকল হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন বলবীর। সচিন-মহিমার আলো তাঁর উপরেও বর্ষিত হয়েছে, চেখেছেন খ্যাতি ও প্রচারের সুধারস। কিন্তু সে সবই এখন অতীত।
লকডাউনের জেরে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ার পরে বিপুল হারে কর্মী ছাঁটাই শুরু হয় গোলি-তে। বলবীরকেও বিদায় নিতে হয়। যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ডাক পাবেন, এমনই আশা তাঁর। এ দিকে রোজগারে ভাটা পড়লে বাড়িভাড়া দিতে হিমশিম খেলে গ্রামে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন বছর পঞ্চাশের সচিনের ডামি। মুম্বই থেকে লুধিয়ানা ফিরতে সপরিবারে পশ্চিম এক্সপ্রেস ধরেন তিনি। সংক্রমণ এড়াতে সঙ্গে নেন ১৫ বোতল স্যানিটাইজার, এন৯৫ মাস্ক এবং বাড়িতে তৈরি করা খাবার। তবু সহযাত্রীদের উদাসীনতার জেরে শেষ পর্যন্ত কোভিড পজিটিভ প্রমাণিত হন তিন জনেই। ভরতি হতে হয় কোভিড হাসপাতালে।
১৯৮৯ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক হয় সচিন তেন্ডুলকরের। আর তখনই গ্রামের এক প্রতিবেশী বলবীরকে জানান, কিশোর ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁর চেহারার মিলের কথা। কিন্তু দূরদর্শনে ভারতীয় দলের টেস্ট ম্যাচ দেখার চেয়ে সে সময় কবাডি খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন বলবীর। পরে অবশ্য টিভিতে সচিনকে দেখে মাথায় কোঁকড়া চুল রাখা শুরু করেন তিনি এবং তাতেই হইচই পড়ে যায় লুধিয়ানা বাজারে। আর তখনই তিনি বুঝতে পারেন, চেহারার এই মিল কাজে লাগানো যায়।
১৯৯ সাল পর্যন্ত এক হাসপাতালে চাকরি করার পরে ভারত-পাকিস্তান টেস্ট দেখতে দিল্লিতে পৌঁছে যান বলবীর। সেই টেস্টেই ১০ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েন অনিল কুম্বলে। ম্যাচ জেতে ভারত। গ্যালারিতেও বলবীরকে নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় আর তার জেরে তাঁকে কমেন্ট্রি বক্সে আমন্ত্রণ জানান স্বয়ং সুনীল গাভাস্কর। সেই সুবাদেই গোটা বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় হয় দ্বিতীয় সচিনের।
পরে তাজ হোটেলে স্বয়ং তেন্ডুলকরের সঙ্গে দেখা করাতেও তাঁকে নিয়ে যান টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আর সেই সুযোগে ছয়খানা ছবিতে সচিনের অটোগ্রাফও সংগ্রহ করেন তিনি। সই দেওয়ার পরে সচিনকে জানান, ছবিগুলি আসলে তাঁর নিজেরই। তাতে প্রচণ্ড অবাক হয়ে যান ক্রিকেট লিজেন্ড। পরে টিম বাসের জানলা থেকে হাত বাড়িয়ে সেই ছবির ৫টি নিজের সংগ্রহে রাখতে চেয়ে নেন সচিন। সে বারই হয়তো জীবনে প্রথম কিছু চেয়ে নেন ক্রিকেট প্রতিভা, দাবি দশম শ্রেণি পাশ করা বলবীরের।
সচিনের সঙ্গে শারীরিক মিলের সুবাদে ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কানাডায় সফর করার সৌভাগ্য হয়েছে বলবীর চন্দের। নিজে উপলব্ধি করেছেন ক্রিকেট দেবতার জন্য ভক্তদের উন্মাদনা। সচিন মনে করে তাঁকে শুধু একবার ছুঁয়ে দেখার আর্জি জানিয়েছেন অগণিত ক্রিকেট অনুরাগী। ভুল হলেও, সেই খ্যাতির কিছু ভাগ পেয়েছেন তিনিও।
তবে এবার নিজেও কিছু করে দেখাতে চান বলবীর চন্দ। লেখক হিসেবে অল্পবিস্তর জনপ্রিয়তা তিনি ইতিমধ্যে পেয়েছেন, এ ছাড়া গানও লেখেন। সেই পুঁজি সম্বল করেই এবার নতুন জীবনে পা রাখতে প্রস্তুত হচ্ছেন সচিনের লুক অ্যালাইক।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।