বাংলা নিউজ > ময়দান > ইউপি, দিল্লির থেকে প্রত্যাখ্যান, টায়ার কারখানায় কাজ, কার্তিকেয়র লড়াই সহজ ছিল না

ইউপি, দিল্লির থেকে প্রত্যাখ্যান, টায়ার কারখানায় কাজ, কার্তিকেয়র লড়াই সহজ ছিল না

কুমার কার্তিকেয়র লড়াইটা মোটেও সহজ ছিল না।

কার্তিকেয় ইউপি-র অনূর্ধ্ব-১৬ দলে জায়গা করতে পারেননি। এর পরে তিনি দিল্লিতে চলে যান এবং সেখানে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী অ্যাকাডেমির অংশ হন। তিনি গাজিয়াবাদের একটি হোস্টেলে থাকতেন, কারণ দিল্লিতে থাকা খুব ব্যয়বহুল ছিল। তাদের আসা-যাওয়া করতে সময় লাগত ৬ঘণ্টা। এ ছাড়া খরচ চালাতে টায়ার কারখানায় কাজ করতেন।

রঞ্জি ট্রফির চলতি মরশুমে অসাধারণ পারফর্ম করেছেন কুমার কার্তিকেয়। ২৪ বছরের বাঁ-হাতি স্পিনার কার্তিকেয় বাংলার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে (রঞ্জি ট্রফি সেমি ফাইনাল) মধ্যপ্রদেশের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। আর কার্তিকেয়র আগুনে বোলিংয়েই সেমি থেকে ছিটকে যায় বাংলা। ১৭৪ রানে বাংলাকে হারায় মধ্যপ্রদেশ। মধ্যপ্রদেশ প্রথম ইনিংসে ৩৪১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮১ রান করে।

বাংলার দল প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৭৩ রান করে অলআউট হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে ৬৮ রানে পিছিয়ে থাকার ফলে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫০ রানের লক্ষ্য পায় বাংলা। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলা মাত্র ১৭৫ রানে অল আউট হয়ে যায়। ফাইনালে মধ্যপ্রদেশ ২২ জুন বেঙ্গালুরুতে মুম্বইয়ের মুখোমুখি হবে। প্রসঙ্গত মুম্বই সবচেয়ে বেশি ৪১ বার রঞ্জি ট্রফি জিতেছে।

কুমার কার্তিকেয় এখন তারকা হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এই জায়গায় পৌঁছতে তাঁকে টায়ার কারখানায় কাজও করতে হয়েছে। তাঁর বাবা উত্তপ্রদেশ পুলিশে কনস্টেবল ছিলেন। বাড়ি থেকে সকলে চেয়েছিল, কুমার কার্তিকেয় ভলিবল খেলে কেরিয়ার তৈরি করুক। তবে তাঁর মনের টান বরাবরই ছিল ক্রিকেটকে ঘিরে।

আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় ঘাঁটি গাড়ছেন ঋদ্ধি? এ বার প্লেয়ারের সঙ্গে মেন্টরের ভূমিকায় দেখা যাবে?

কার্তিকেয় মূলত উত্তর প্রদেশের সুলতানপুর জেলার বাসিন্দা। শুরুতে তিনি ব্যাটসম্যান হতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁর ছোটবেলার কোচ সর্বেশ শ্রীবাস্তব বলেছিলেন, ‘তোমার উচ্চতা ভালো। সে ক্ষেত্রে বোলার হিসেবে তুমি বেশি সফল হবে। তবে এতে কার্তিকেয় খুশি হয়নি।’

কুমার কার্তিকেয় ইউপি-র অনূর্ধ্ব-১৬ দলে জায়গা করে নিতে পারেননি। এর পরে তিনি দিল্লিতে চলে যান এবং সেখানে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী অ্যাকাডেমির অংশ হন। তিনি গাজিয়াবাদের একটি হোস্টেলে থাকতেন, কারণ দিল্লিতে থাকা খুবই ব্যয়বহুল ছিল। তাদের আসা-যাওয়া করতে সময় লাগত ৬ ঘণ্টা। এ ছাড়া খরচ চালাতে টায়ার কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে তিনি নতুন টায়ার পরিষ্কার করতেন। এ ভাবেই এক বছর কাটিয়েছিলেন।

কো কার্তিকেয়র প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেন এবং জীবন বদলে দেন

কুমার কার্তিকেয়ের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন কোচ সঞ্জয় ভরদ্বাজ। এমন কী তাঁর খরচও বহন করেছিলেন। দ্য উইক-এ এক সাক্ষাৎকারে ভরদ্বাজ বলেন, ‘৬ মাসে বোলিংয়ে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন এনেছিল ও।’ তবে দিল্লির হয়ে খেলারও সুযোগ পায়নি কুমার কার্তিকেয়। অর্থাৎ ২টি রাজ্যে তিনি নির্বাচিত হননি। এর পর তাঁকে এমপি-তে যাওয়ার পরামর্শ দেন কোচ। এর পর তিনি শাহদোলের হয়ে খেলেন। সেখানে ২ বছর না খেললে রাজ্যের হয়ে ট্রায়ালে তিনি নামতে পারতেন না।

এক দিনে খরচ করেছিলেন ১১ লাখ টাকা

এমপি রঞ্জি দলে জায়গা পাওয়ার পর ম্যাচ ফি হিসেবে পেয়েছিলেন ১.১১ কোটি টাকা। এর পর শপিং মলে গিয়ে একদিনেই ১১ লাখ টাকা খরচ করেন তিনি। কার্তিকেয় বলেন, ‘আগে আমার কাছে টাকা ছিল না। তাই সেদিন শুধু কেনাকাটা করেছিলাম।’ এ ছাড়াও তিনি শাহদলের খেলোয়াড়দের জন্য ১৩.৫ লক্ষ টাকার ক্রিকেট সামগ্রী কিনেছিলেন। আইপিএল ২০২২-এ আহত আরশাদ খানের জায়গায় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে ১.২০ কোটিতে দলে নেয়।

মুম্বইয়ের হয়ে ৩টি ম্যাচ খেলার সুযোগও পেয়েছেন কার্তিকেয়। কেকেআরের বিপক্ষে ২ উইকেট এবং রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ১ টি উইকেট নিয়েছিলেন। এ দিকে রঞ্জির সেমিফাইনালের আগে কোয়ার্টার ফাইনালে পঞ্জাবের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটসহ ম্যাচে মোট ৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। কার্তিকেয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১১ ম্যাচে ১৯ গড়ে ৫০টি উইকেট নিয়েছেন। ২৮ রানে ৬ উইকেট তাঁর সেরা পারফরম্যান্স। প্রসঙ্গত ক্রিকেটে কেরিয়ার গড়তে গিয়ে ১০ বছর তিনি বাড়ি যাননি।

বন্ধ করুন