যে হাত দিয়ে একদিন আগুনের গতিতে বল ছুটত, আজ সেই হাত কোনও না কোনও বাড়ির দেওয়ালে রংয়ের আঁচড় কাটে। একসময় যাঁর আগুনে বোলিং জেলা স্তরের ব্যাটসম্যানদের ত্রাস ছিল, আজ সেই হাতে উঠেছে রঙের তুলি। অভাবের সংসারে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য রংমিস্ত্রির কাজ করছেন বালুরঘাট শহরের সঞ্জিত মণ্ডল ওরফে মিঠুন। এই নামে একটা সময় কাঁপত বাইশ গজের বড় বড় স্থানিয় ব্যাটসম্যান, আজ সেই প্রতিভা অভাবের কারণে হারিয়েছে নিজের জীবনের আসল রং। যদি কেউ তার পাশে দাঁড়াতেন তাহলে হয়তো এই সময় দেখতে হতনা মিঠুনকে।
কথায় আছে, সংসারে যখন অভাব দেখা যায়, ভালোবাসাও তখন জানলা দিয়ে পালায়। সঞ্জিত মণ্ডলের গল্পটাও অনেকটা সেই রকমই। কখনও টাউন ক্লাব কিংবা কখনও ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন। গোটা বালুরঘাট একডাকে চিনত মিঠুনকে। যেখানেই টেনিস টুর্নামেন্ট হতো, সেখানেই খেপ খেলতে ডাক পড়ত। যে কোনও দলের হয়ে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য বোলিং করতেন মিঠুন। কিন্তু আজ সেই ডাক আর আসে না। এত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও রাজ্য স্তরে কখনও খেলার সুযোগ আসেনি। অভাবের কারণে নিজের ভালোবাসাকে হারিয়েছেন মিঠুন। অনেকেই তাঁর প্রতিভা দেখে বলেছিলেন ভাল দলে সুযোগ করে দেবেন, ভাল চাকরি করে দেবেন, কিন্তু সব প্রতিশ্রুতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়েগেছে। ফলে শেষ পর্যন্ত খেলা ছাড়তে হয় মিঠুনকে।
১৭ বছর ধরে জেলাস্তরে টানা ক্রিকেট খেলেছিলেন মিঠুন। স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার। একটা সময় তো এমন ছিল যে তাঁকে পাওয়ার জন্য বালুরঘাটের বিভিন্ন ক্লাবগুলোর মধ্যে রীতিমতো লড়াই লেগে যেত। তাঁর চাহিদা ছিল এতটাই। আজও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দিশারী পাড়া এলাকায় কান পাতলে শোনা যায় সেই গল্প। তবে ক্রিকেট আজ সঞ্জিতের কাছে প্রাক্তন। ২০০৬ সাল থেকে আর কখনও ক্রিকেটের দিকে তিনি ফিরেও তাকাননি। এখন তিনি রংমিস্ত্রি। ক্রিকেট দিয়ে সংসারের অভাব মেটেনি। আজও নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সঞ্জিত মণ্ডলের। কারণ কাজ তো আর নিয়মিতভাবে আসে না! সেকারণে ভাতের হাঁড়ি চড়ানোর আগে আজও মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় তাঁকে। আজ ৪৮ বছরের মিঠুন কোনওভাবে নিজের সংসার চালান।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।