বাংলা নিউজ > ময়দান > করোনা জেরে কোনও কাজ নেই, পেটের দায়ের সব্জি বিক্রি করছেন বাংলার ফিফা রেফারি

করোনা জেরে কোনও কাজ নেই, পেটের দায়ের সব্জি বিক্রি করছেন বাংলার ফিফা রেফারি

সপরিবারে সমর পাল।

২০১৪ সালে সহকারী রেফারি হিসেবে সমর পাল ফিফার ব্যাজ পেলেও, কোনও চাকরি পাননি। অনেককেই অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।

ফিফার সহকারী রেফারি হিসেবে একটা সময়ে সাফল্যের সঙ্গে ম্যাচ পরিচালনা করতে তিনি। সেই সমর পালকেই এখন সব্জি বিক্রি করে সংসার চালাতে হচ্ছে। এতটাই খারাপ পরিস্থিতি তাঁর, সব্জি বিক্রি না হলে, খাবার জোটে না।

২০১৪ সালে প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় রেফারি হিসেবে এবং সমর পাল সহকারী রেফারি হিসেবে ফিফার ব‍্যাজ পেয়েছিলেন। এর পর থেকে টানা ছ' বছরে ২৮ টা দেশে আন্তর্জাতিক ম‍্যাচে সহকারী রেফারির ভূমিকা পালন করেছেন সমর।

কিন্তু ২০২০ সাল থেকে করোনার জেরে সে ভাবে কোনও ম‍্যাচও হয়নি। স্বাভাবিক ভাবে তিনিও ম্যাচ পাননি। গত মাসে অবশ্য এএফসি কাপের গ্রুপ স্টেজের হংকং ও ওমান ম‍্যাচ খেলানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করোনার জন‍্য সেটাও বাতিল হয়ে যায়। এখন সমরের আর্থিক সঙ্কট তীব্র আকার নিয়েছে।

গত বছর লকডাউনে জমানো টাকা দিয়ে কোনও মতে সংসার চালিয়েছিলেন। কিন্তু এই বছর সেই ভাঁড়ারও শেষ। পেটের দায়ে শেষ পর্যন্ত লকডাউন শুরু হওয়ার দিন দুয়েক আগে থেকেই নিজের বাড়িতেই কাঁচা সব্জি নিয়ে বিক্রি করতে বসেছেন সমর পাল।

সহকারী রেফারি হিসেবে বহু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিয়েছেন সমর।
সহকারী রেফারি হিসেবে বহু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিয়েছেন সমর।

সমরের বাড়ি বাগনানের কাছে মুককল্যাণ গ্রামে। গ্রামের বাড়িতেই কাঁচা সব্জি বিক্রি করে কোনও মতে সংসার চালাচ্ছেন ফিফার এলিট গ্রুপের সহকারি রেফারি। তাঁর বাড়িতে রয়েছেন মা, স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলে। ছোট পরিবার হলেও কাজ না থাকায় চার জনের সংসার চালাতেই অথৈ জলে বাংলার সমর।

সমর ফিফা রেফারির তকমা পেলেও, কোনও চাকরি পাননি। অনেককেই অনুরোধ করেছেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। সমর বলছিলেনও, ‘একটা চাকরির জন‍্য অনেক লোককেই বলেছিলাম। কিন্তু কিছু লাভ হয়নি। গত বছর লকডাউনে তাও জমানো টাকায় সংসারটা কোনও মতে চালিয়ে নিয়েছিলাম। এ বার সেই টাকাও শেষ। বাধ‍্য হয়েই সব্জি বিক্রি করতে বসেছি।’

আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলালে ভাল টাকাই রোজগার করা যায়। কিন্তু সমরের দাবি, ‘আমরা সারা বছর ম্যাচ পাই না। প্রত্যেক মাসে কিছু তো রোজগার দরকার। ফিফার ব্যাজ পাওয়ার পরও কোনও চাকরি পাইনি। এ দিকে রেফারির সর্বোচ্চ সময় ৪৫ বছর। যদি ফিট থাকে কেউ, তবে ৪৫ বছর পযর্ন্ত ম‍্যাচ করতে পারবে। তার পর আমার কী হবে? ’ ফোনের ওপারে কথাগুলো বলার সময়ে যেন গলা ধরে এল সমরের।

রেফারি রথিন মুখোপাধ্যায়কে দেখেই এই পেশা বেছে নিয়েছিলেন সমর। সমরের পাশের গ্রাম চন্দ্রভাগে থাকতেন রথিন। ২০০৩ সালে রেফারি হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেছিলেন সমর। পরে ২০১৬ সালে সহকারী রেফারি হিসেবে ফিফার ব্যাজ পান। সমর বলছিলেন, ‘যখন ফিফার ব‍্যাজ পেলাম, মনে হয়েছিল, একটা জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। এত দিনের লড়াই সফল হয়েছে। কিন্তু কখনও ভাবিনি আমাকে একদিন সব্জি বিক্রি করে সংসার চালাতে হবে। এখন ভাবি, কেন যে এই রেফারি হতে এসেছিলাম? মনে হয়, ভুলই করেছি! বলুন তো, এর পর নতুন প্রজন্ম কেন রেফারি হতে চাইবে?’

বন্ধ করুন