প্রায় ৮ বছর আগের কথা। পঞ্জাবের আজনালার এক পুরনো, পরিত্যক্ত কুয়ো থেকে মিলেছিল ২৮২টি কঙ্কাল। তারপর থেকেই সকলের প্রশ্ন, কবে, কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের? এভাবে তাঁদের গণকবরের কারণই বা কী?
১৮৫৭-র সিপাহী বিদ্রোহ: জুড়ে গেল বিজ্ঞান ও ইতিহাস
খননের স্থান, 'কালোঁ কা কুয়ান (বিদ্রোহীর কবর)' নামে পরিচিত। এটি অমৃতসরের কাছে আজনালায় অবস্থিত।
ডিএনএ এবং আইসোটোপ বিশ্লেষণ ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে কিছু উত্তর পেলেন গবেষকরা। গবেষণার রিপোর্ট বলছে, কঙ্কালগুলি প্রায় ১৬৫ বছর পুরানো। ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের ডিএনএ ক্রমের মধ্যে একটি সংযোগ সূত্র রয়েছে। ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে বসবাসকারী ভারতীয়দের ডিএনএ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও পড়ুন : Cyclone: আসছে আরেকটা আমফান? মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস
হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজির (CCMB) নেতৃত্বে এই জেনেটিক গবেষণা চালানো হয়।
গবেষকরা বলছেন, ঐতিহাসিক রেকর্ডের সঙ্গে এই ফলাফলগুলি মিলিয়ে দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে এই সময়টা মিলে যাচ্ছে। সেই সময়ে ব্রিটিশদের গণহত্যার শিকার ভারতীয় সিপাহিদের দেহ হতে পারে এগুলি।
বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবের কারণে কঙ্কালগুলির পরিচয় এবং ভৌগলিক উত্স নিয়ে এখনও সন্দেহ রয়েছে। CCMB বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা DNA বিশ্লেষণের জন্য প্রায় ৫০ টি নমুনা এবং আইসোটোপ বিশ্লেষণের জন্য ৮৫টি নমুনা সংগ্রহ করেছে।
'গবেষণার ফলাফল ঐতিহাসিক প্রমাণগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সম্ভবক এটি ২৬তম নেটিভ বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের সিপাহীদের দেহ। বাংলার পূর্বাঞ্চল, ওড়িশা, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত,' জানিয়েছেন জে এস সেহরাওয়াত, গবেষণার প্রধান লেখক।
ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুযায়ী এই ব্যাটালিয়নের সিপাহিরা বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থিত মিয়ান মীর-এ নিযুক্ত ছিল। ১৮৫৭ সালের অভ্যুত্থানের সময় ব্রিটিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন তাঁরা। ভারতীয় সিপাহিদের আজনালার কাছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বন্দী করেছিল। তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
গবেষণাটি জে এস সেহরাওয়াত, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নৃতত্ববিদ, হায়দ্রাবাদের CCMB, লখনউয়ের বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (BHU) সহযোগিতায় গবেষণাটি সম্পন্ন হয়। গবেষণাটি বৃহস্পতিবার ফ্রন্টিয়ার্স ইন জেনেটিক্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।