পেট্রোলের দাম নিয়ে চিন্তা, সমালোচনা, তর্ক তো সকলেই করছেন। কিন্তু আমাদের মধ্যেও কেউ কেউ একটু আলাদা। বিতর্ক, হাহাকার নয়, বরং বিকল্প সমাধানেই তাঁদের আগ্রহ। আর সেরকমই একজন সুশীল আগরওয়াল। সৌরশক্তিতে চলা গাড়ি বানিয়ে নামিদামী গাড়ি প্রস্তুতকারককে লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন ওড়িষার কৃষক।
ময়ূরভঞ্জ জেলার করঞ্জিয়ায় বাড়ি সুশীলের। পেশায় কৃষক। নেশায় গাড়ির মেকানিক। তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে গেলেই শোনা যায় ঠুকঠাক আওয়াজ। নিজের গ্যারেজে এক মনে কাজ করে চলেন সুশীল।
'আমার গাড়িটায় ৮৫০ ওয়াট-এর মোটর রয়েছে। ১০০ Ah/ ৫৪ Volt -এর ব্যাটারি। একবার চার্জ দিলেই ৩০০ km আরামসে চলে,' গ্যারেজে দাঁড়িয়েই হাসিমুখে বললেন সুশীল। আর চার্জ দিতেও কোনও সমস্যা নেই। বাড়ির উঠোনে বা মাঠে রোদের মধ্যে রেখে দিলেই হল।
হঠাত্ এরকম সোলার পাওয়ারের গাড়ি বানানোর বুদ্ধি পেলেন কোথায়? সুশীলের জবাব, 'আসলে আমার বাড়িতেই গ্যারেজে টুকটাক কাজ করি। যখন করোনা লকডাউন হল, হাতে অনেক সময় ছিল। সেই সময়েই গাড়িটা তৈরী শুরু করলাম।'
সুশীল জানালেন, গাড়িটার একটাই একটু খামতির দিক- চার্জ হতে সময় নেয় প্রায় সাড়ে ৮ ঘণ্টা।
'তবে এটার একটা ভাল দিকও রয়েছে,' বললেন তিনি। কী সেই ভাল দিক?'এই ধরণের ধীরে ধীরে চার্জ নেওয়া ব্যাটারি একটানা ১০ বছর পর্যন্ত ভাল থাকে। তাই বার বার পাল্টানোর খরচটা নেই,' বাখ্যা তাঁর।
গাড়ির মোটর থেকে ইলেকট্রিকাল ফিটিং, চ্যাসি- সবই নিজে হাতে করেছেন সুশীল। সঙ্গে অবশ্য আরও দুই মেকানিক ও এক বন্ধুকে পেয়েছিলেন।'ওঁদের সাহায্য ছাড়া হত না,' বললেন সুশীল।
আপাতত গাড়িটির ফ্রেমটুকুই বানিয়েছেন তিনি। গত ৩ মাস ধরে টুকটাক চালাচ্ছেনও। তবে, আইনি কারণে এই গাড়ি নিয়ে আপাতত বেশি দূর যেতে পারবেন না তিনি।
সুশীলের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করছেন জেলার সরকারি আধিকারিকরা। বায়ুদূষণ কমাতে ও বিকল্প শক্তিকে উত্সাহ দিতে তাঁর এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন তাঁরা। এ ধরণের উদ্যোগীদের পাশে যে সরকারের দাঁড়ানো প্রয়োজন, তাও স্বীকার করছেন অনেকেই।
তাছাড়া টেসলার গাড়িতে না হয় ব্যাটারি চার্জ দিতে ইলেকট্রিক প্লাগ পয়েন্ট লাগে। সেটুকুও বাদ দিয়ে ফেলেছেন সুশীল। খালি সূর্যের আলোতেই যদি গাড়ি চলে, তবে ক্ষতি কী?