ওয়াইফাইয়ের মতো দ্রুত কাজ করবে স্বপ্ন। দুইজন মানুষ এবার নিজেদের স্বপ্নে কথা বলতে পারবেন। একটি যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গ এবং অন্যান্য জৈবিক ডেটা ট্র্যাক করে, এমনটাই দেখেছেন বিজ্ঞানীরা।
বিষয়টা অনেকটা হলিউডের অন্যতম আলোচিত ছবি ইনসেপশনের মতন। এই ছবিতে স্বপ্নের জগৎ আর বাস্তবের পার্থক্য দেখানো হয়েছে। একইভাবে এবার শীঘ্রই এই স্বপের জগৎ, কল্পনা বাস্তবে উপলব্ধি করা যাবে। আমেরিকার এক গবেষণায় এ দাবিই করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: (Cyber Attack: ৩ কোটিরও বেশি পাসওয়ার্ড ও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস! উদ্বেগ বাড়াচ্ছে বড় সাইবার হামলা)
ক্যালিফোর্নিয়ার স্টার্টআপ আরইএমস্পেস- এর গবেষকরা একটি সফল পরীক্ষায় জানতে পেরেছেন, দু' জন মানুষ স্বপ্নের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হতে পারেন। গবেষকরা, তাঁদের পরীক্ষার জন্য প্ৰথমে বিশেষভাবে দু' জন ব্যক্তিকে বেছে নেন। যাঁরা দু' জনেই সুস্পষ্ট স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাঁদের মধ্যেই একটি সাধারণ বার্তাও বিনিময় করেছিলেন তাঁরা। এটা সম্ভব হয়েছে লুসিড বা উজ্জ্বল স্বপ্নের কারণেই।
আসলে, লুসিড বা উজ্জ্বল স্বপ্ন এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি স্বপ্নের সময় সচেতন থাকেন এবং তাঁর স্বপ্নের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। এ সময় স্বপ্নে থাকা ব্যক্তিটি জানেন যে তিনি স্বপ্ন দেখছেন।
যে ঐতিহাসিক ঘটনা, প্রায়শই কল্পবিজ্ঞানে নজর কাড়ে, তা আরইএমস্পেস-এর জন্য বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আরইএমস্পেস গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে এটি ঘুম গবেষণার জন্য একটি বড় মাইলফলক হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা, দক্ষতা প্রশিক্ষণ এবং আরও অনেক কিছুর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে এই পদ্ধতি। এছাড়াও কোনও নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই স্বপ্ন জগতে এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়ানোর পরিবর্তে, নিজেরই স্বপ্নে নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী পদক্ষেপ করার সুযোগ করে দেয়।
কীভাবে স্বপ্নে বার্তা পাঠানো সম্ভব হল
প্রথমে, মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গ এবং অন্যান্য বায়োলজিক্যাল ডেটা ট্র্যাক করতে একটি ডিভাইস ব্যবহার করেন গবেষকরা। এর দরুণ কেউ কখন স্বপ্ন দেখছেন, তা জানা যায় সহজেই। জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই, সিস্টেম প্রথম অংশগ্রহণকারীর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে এবং 'রেমিও' নামে একটি বিশেষ ভাষায় একটি এলোমেলো শব্দ পাঠায়। তারপর ঘুমানোর সময় ইয়ারবাডে 'ঝিলাক' শব্দটি বাজানো হয়। স্বপ্নে, অংশগ্রহণকারী শব্দটি অনায়াসেই শুনতে এবং এটি জোরে জোরে পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন। সেন্সরগুলি সেই প্রতিক্রিয়াটি ক্যাপচার করে, এবং এটি সিস্টেমে ফেরত পাঠায়।
ঠিক আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী নিজেও একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সিস্টেমটি তাঁরও মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দেখে, ইয়ারবাডের মাধ্যমে একই শব্দ 'ঝিলাক' পাঠিয়ে দেয়। তিনিও স্বপ্নে এটি শুনে, উচ্চস্বরে পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। এরপর যখন তিনি জেগে উঠলেন, তিনি নিশ্চিত করেন যে তিনি যে শব্দটি শুনেছেন তা প্রকৃতপক্ষে 'ঝিলাক'ই ছিল। যাইহোক, কোন নির্দিষ্ট সরঞ্জাম ব্যবহার করে এই গবেষণা করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এইভাবেই স্বপ্ন দেখার সময়, দুই ব্যক্তির মধ্যে প্রথম যোগাযোগ করানো সফল হয়েছে।
আরও পড়ুন: (Red Green Light Auroras: মহাকাশে এ কোন রহস্যময় আলো! ভিডিয়ো দেখিয়ে তাক লাগালেন NASA নভোচারী)
প্রসঙ্গত, আরইএমস্পেস ঘুম এবং উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখার প্রযুক্তি ডিজাইন করে, আরইএমস্পেস-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মাইকেল রেডুঙ্গা স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ সম্ভব করার জন্য এই গবেষণা করেন। তাঁর দাবি, গতকাল, স্বপ্নে যোগাযোগ করাটা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর মতো মনে হয়েছিল। আর আগামীকাল, এটি এত সাধারণ হবে যে আমরা এই প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের জীবনই কল্পনা করতে পারব না।