গুগল ম্যাপ আসার পর ভারতের যে কোনও প্রান্তে যাওয়া সহজ হয়ে গিয়েছে। গাড়িতে উঠে, ম্যাপে নির্দিষ্ট জায়গার লোকেশন দিলেই হয়ে যায় কাজ। ম্যাপ দেখে পৌঁছে যাওয়া যায় গন্তব্যে। কিন্তু গুগল ম্যাপের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হওয়াটাও ঠিক নয়। অন্ধভাবে বিশ্বাস করে, অনেকেই বড় বড় সমস্যায় পড়ছেন। বিহার থেকে গোয়া যাওয়া এক পরিবারের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে। গুগল ম্যাপের কারণে তাঁদের সারা রাত কেটেছে ঘন জঙ্গলে।
আরও পড়ুন: (ফটোগ্রাফি করতে চান? জানুন কীভাবে ক্যামেরা বাছবেন, সেরা লেন্স কী, সব খুঁটিনাটি)
ঠিক কী ঘটেছে
পরিবারটি বিহার থেকে গোয়া যাচ্ছিল। নেভিগেশনের জন্য গুগল ম্যাপের সাহায্য নেন তাঁরা। কর্ণাটকের বেলাগাভি জেলায় পৌঁছোনোর পরে, ম্যাপ তাঁদের একটি পথ দেখায়, যা খানাপুরের ঘন ভীমগড় বনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। পরিবারও তা অনুসরণ করে। এরপর আট কিলোমিটার ভিতরে যাওয়ার পর পরিবার বুঝতে পারে যে তাঁরা এই পথে এসে ভুল করেছেন। এবড়োখেবড়ো রাস্তা আর ঘন জঙ্গলে পৌঁছে ফোনের নেটওয়ার্কও চলে যায়। নেটওয়ার্ক চলে যাওয়ার পর গুগল ম্যাপও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর পরে, বন থেকে বেরিয়ে আসার কোনও রাস্তা না পেয়ে পুরো রাত বনেই কাটাতে হয়েছিল ওই পরিবারকে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই ওই পরিবারকে চার কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়েছে নেটওয়ার্কের খোঁজে। অবশেষে তাঁরা এক জায়গায় একটি নেটওয়ার্ক খুঁজে পান এবং অবিলম্বে জরুরি হেল্পলাইন ১১২-এ যোগাযোগ করেন। পরে পুলিশ এসে তাঁদের জঙ্গল থেকে বের করে নিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, এই বন বিপজ্জনক বন্য প্রাণীদের জন্য পরিচিত। এমন পরিস্থিতিতে যে কোনও খারাপ কিছু ঘটতে পারত।
খানাপুরের পুলিশ ইন্সপেক্টর মঞ্জুনাথ নায়ক জানাচ্ছেন যে ওই পরিবার মোবাইল নেটওয়ার্ক ফিরে পাওয়ার পরেই জরুরি পরিষেবায় যোগাযোগ করেন। বেলাগাভি পুলিশ কন্ট্রোল রুম এই তথ্যটি খানাপুর পুলিশকে দেয়। এরপর, কর্তৃপক্ষ এই পরিবারকে সনাক্ত করতে এবং গ্রামবাসীদের সহায়তায় তাঁদের কাছে পৌঁছোনোর জন্য জিপিএস ব্যবহার করেছিল। মিঃ নায়ক আরও উল্লেখ করেছেন যে এই বনটি বৈচিত্র্যময় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক ভাল্লুকের আক্রমণে একজন কৃষক গুরুতর আহতও হয়েছেন। তাই পরিবারটি যে মোবাইল নেটওয়ার্ক পেয়েছিল, এটাই সৌভাগ্যের ব্যাপার।
আরও পড়ুন: (Deloitte: '১টিবি তথ্য হাতিয়ে নিয়েছি', সাইবার হানার দায় স্বীকার, কী বলল ডেলয়েট?)
এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে
গত মাসেও উত্তরপ্রদেশের বেরেলি জেলায় গুগল ম্যাপ-এর কারণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। বিয়ের ভেন্যুতে পৌঁছতে গুগল ম্যাপের সাহায্য নেন তাঁরা। এরপর গুগল ম্যাপ অনুযায়ী ভুল করে নির্মাণাধীন একটি সেতুর উপর দিয়ে যেতে গিয়ে গাড়িটি নদীতে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই গাড়িতে থাকা তিনজনের মৃত্যু হয়। গুরুগ্রাম থেকে বেরেলি যাওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। জানা গিয়েছে, গাড়িটি সেতুর উপর দিয়ে ৫০ ফুট উঁচু থেকে রামগঙ্গা নদীতে পড়ে যায়। তবে অসম্পূর্ণ ফ্লাইওভারে এ সংক্রান্ত কেন কোনও সতর্কতা সাইন বোর্ড ছিল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
২০২৪ সালের অগস্ট মাসে এক্স-এর একজন ব্যবহারকারী, গুগল ম্যাপ অ্যাপে ভুলের কারণে বেঙ্গালুরু থেকে মুম্বই যাওয়ার একটি ফ্লাইট মিস করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন। তিনি এইচএসআর লেআউট থেকে কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কেআইএ) পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ ভ্রমণ করছিলেন। ম্যাপ অনুযায়ী, কথা ছিল যে ট্রিপটি এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সময় নেবে, কিন্তু এটি আসলে তিন ঘণ্টা সময় নিয়েছে, যার ফলে তিনি ফ্লাইটও মিস করেছিলেন।