বরফ গলছে হিমবাহের। ভয় ধরাচ্ছে হিমালয়। হিমালয়ের ১৯০টি হিমবাহী হ্রদ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এবার বন্যা মোকাবিলায় বড় পদক্ষেপ করতে চলেছে সরকার। যে যে হিমবাহী হ্রদ, উচ্চ ঝুঁকির কারণ হতে পারে, প্রত্যেকটির উপর নজর রাখা হবে।
২০১৩ সালে কেদারনাথ বিপর্যয়, হিমবাহী হ্রদের বরফ গলে গিয়ে সৃষ্ট বন্যা বিপদ সম্পর্কে কিছুটা সচেতনতা জাগিয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের অক্টোবরে, সিকিমে হিমবাহী হ্রদ আউটবার্স্ট, হয়ে প্রবল বন্যার সৃষ্টি করেছিল। ইংরেজিতে যাকে বলা হচ্ছে, 'গ্রেসিয়াল লেকস আউটবার্স্ট ফ্লাড' (জিওএলএফ)। এর ফলস্বরূপ মারা গিয়েছিলেন ১৪ জন। তখনই প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল যে সমগ্র হিমালয় অঞ্চল এই মুহূর্তে জনবসতির জন্য ঠিক কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
আরও পড়ুন: (প্রতি কিমিতে খরচ মাত্র ২ টাকা, প্রকাশ্যে এল Maruti Suzuki Swift CNG)
এই ট্র্যাজেডির কারণেই সরকার একটি জাতীয় কর্মসূচি শুরু করেছে। চারটি রাজ্য এবং দু' টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেরই ১৯০টি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ হিমবাহী হ্রদের উপর নজর রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এনডিএমএ) এর নেতৃত্বে এই কর্মসূচি, চলবে৷ এর অধীনে, এই হ্রদগুলির নীচের অঞ্চলগুলিতে অটোমেটিক আবহাওয়া এবং জল স্তর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কোনও বিপদ এলে প্রাথমিক সতর্কতা দেওয়ার জন্য, বিশেষ ব্যবস্থাও করা হবে।
হিমালয় অঞ্চলের, জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশে প্রায় ৭,৫০০ হিমবাহী হ্রদ রয়েছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি এই হ্রদের মধ্যে ১৯০টি হ্রদকে 'উচ্চ ঝুঁকি' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে হিমাচল প্রদেশে ৪৮টি, তারপরে সিকিমে ৪০টি, লাদাখে ৩৫টি, অরুণাচল প্রদেশে ২৮টি, জম্মু ও কাশ্মীর ২৬টি এবং উত্তরাখণ্ড রাজ্যে ১৩টি হিমবাহী হ্রদ বর্তমান।
আরও পড়ুন: (Air Taxi: ২০২৬ সাল নাগাদ এয়ার ট্যাক্সি ওড়াবে DGCA, এই শহরে প্রথম চালু হবে)
হিমবাহী হ্রদ আউটবার্স্ট (জিওএলএফ) কখন হয়
হিমবাহে আটকে থাকা যখন জল হঠাৎ মুক্ত হয়ে যায়, তখনই এই বিপদ ঘটে। এটি দ্রুত, প্রচুর পরিমাণে জল ছেড়ে, বিরাট জনবসতিকেই ভাসিয়ে দিতে পারে। মারাত্মক বন্যার সৃষ্টি হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এই ধরনের অসংখ্য হ্রদের জন্ম দিয়েছে। ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটির উপদেষ্টা সাফি আহসান রিজভি, টাইম অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন যে শীঘ্রই ভারতের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক বিপদ হয়ে উঠবে পারে এই জিওএলএফ।
প্রসঙ্গত, জুলাই মাসে অনুমোদিত এই কর্মসূচিতে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করবে সরকার। রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির জন্য বন্যা ব্যবস্থাপনা, আগুন নেভানোর পরিষেবা এবং অন্যান্য দুর্যোগ ত্রাণ প্রচেষ্টার উন্নতির জন্য সরকারের যে ১২,৫৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, এই নতুন কর্মসূচি তারই একটা অংশ।
ইতিমধ্যেই, সমস্ত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সংস্থা, বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান, ভারতীয় সেনাবাহিনী, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ হ্রদগুলি পরিদর্শন করছে। এই হ্রদের কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকি খতিয়ে দেখছে। একই সময়ে, ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি মন্ত্রনালয় গ্লাসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাডস- এর মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন অত্যাধুনিক পদক্ষেপ করেছে। হ্রদ জরিপ, বিপদের সম্ভাবনা এবং হ্রদের ভলিউম গণনা করার জন্য এআই, ড্রোন এবং স্যাটেলাইট-এর মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।