জার্মান গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থা ভোক্সওয়াগেনের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করল ভারত। অভিযোগ, 'ইচ্ছাকৃতভাবে' ওই সংস্থা ভারতকে বিপুল কর ফাঁকি দিয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!
ভারতের তরফে দাবি করা হয়েছে, অডি, ভিডাব্লিউ এবং স্কোডা গাড়ি তৈরির জন্য যেসমস্ত সরঞ্জাম ভোক্সওয়াগেনকে কিনতে হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে তার জন্য ভারতকে কম পরিমাণ আমদানি শুল্ক দিয়েছে জার্মানির ওই সংস্থা।
তথ্য বলছে, এখনও পর্যন্ত এই ধরনের যতগুলি ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে কর ফাঁকি দেওয়ার এই ঘটনাটি অন্যতম বৃহত্তম।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ভোক্সওয়াগেন আসলে 'প্রায় সম্পূর্ণ গাড়ি'ই আমদানি করেছে! তবে, সেই আমদানি করা হয়েছে মূলত যন্ত্রাংশ হিসাবে। অর্থাৎ, অ্য়াসেম্বল না করা অবস্থায় ওই গাড়ির প্রায় সমস্ত যন্ত্রাংশ তারা আমদানি করেছে।
এক্ষেত্রে 'কমপ্লিটলি নক্ড ডাউন ইউনিটস' বা সিকেডি নীতি অনুসারে, ভারতের অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কর পাওয়ার কথা। কিন্তু, ভোক্সওয়াগেন কর্তৃপক্ষ দিয়েছে মাত্র ৫ থেকে ১৫ শতাংশ আমদানি কর!
কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য তারা নানা অসাধু উপায় অবলম্বন করেছে বলেও কার্যত অভিযোগ করা হয়েছে। সেই অনুসারে, তারা আমদানি সংক্রান্ত অনেক তথ্য যেমন গোপন করেছে, আবার বহু তথ্য ভুলভাবে শ্রেণিভুক্ত করে উপস্থাপিত করা হয়েছে।
এই ধরনের সমস্ত আমদানিগুলি করা হয়েছে ভোক্সওয়াগেনের ভারতীয় উৎপাদন কেন্দ্র বা ইউনিট - 'স্কোডা অটো ভোক্সওয়াগেন ইন্ডিয়া' থেকে। যে গাড়িগুলির প্রায় সম্পূর্ণ যন্ত্রাংশ এভাবে কর ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে - স্কোডা সুপার্ব, কোডিয়াক। তালিকায় আরও রয়েছে - অডি কিউ৫, ভিডাব্লিউ-র টিগুয়ান এসইউভি প্রভৃতি।
ভারতের তরফে এই বিষয়ে যে তদন্ত চালানো হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, আমদানি কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য একাধিক আলাদা-আলাদা শিপমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ কর চাপানো না হয়। ভারতের অভিযোগ, এভাবে ভোক্সওয়াগেন কর্তৃপক্ষ আসলে ভারতের সঙ্গে হওয়া চুক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করেছে।
সূত্রের দাবি, মহারাষ্ট্রের কাস্টমস কমিশনারের দফতরের তরফ থেকে ৯৫ পৃষ্ঠার ওই নোটিশ ভোক্সওয়াগেন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। তবে, সেই নোটিশ এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে প্রকাশ্যে আনা হয়নি। যদিও সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সংশ্লিষ্ট সূত্র সেই নোটিশ দেখেছে এবং সেই অনুসারেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ভারত সরকারের বক্তব্য, ২০১২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আমদানি কর বাবদ ভারতকে ২.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার কথা ওই জার্মান সংস্থার। কিন্তু, তারা দিয়েছে মাত্র ৯৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, ভারতের আরও প্রাপ্য রয়েছে ১.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার!
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, তারা সর্বদাই আন্তর্জাতিক আইন মেনে কাজ করে। এক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা তারা খতিয়ে দেখছে। তাদের তরফে ভারত সরকারের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার করারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।