অ্যাপল-এর আবেদন খারিজ করে দিল ভারতের অ্যান্টিট্রাস্ট সংস্থা। অভিযোগ ছিল, প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন করেছে অ্যাপল। সেই সংক্রান্ত তদন্তের রিপোর্ট তৈরি ও তা প্রকাশের প্রক্রিয়া যাতে আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়, সেই আবেদনই করেছিল অ্যাপল।
কিন্তু, ভারতীয় অ্যান্টিট্রাস্ট সংস্থা তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দেয়। ফলত, তদন্ত ও মামলা যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট তদন্ত রিপোর্টে অ্যাপলের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিযোগিতা আইন ভাঙার অভিযোগ সঠিক বলেই প্রমাণিত হয়েছে। অ্যাপল-এর আবেদন খারিজ করা নিয়ে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে যে অন্তর্বর্তী নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি সূত্র সেই নির্দেশিকা সম্পর্কে অবহিত বলে দাবি করা হচ্ছে।
এর আগে গত অগস্ট মাসে 'কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া' (সিসিআই) সংশ্লিষ্ট তদন্ত রিপোর্টগুলি প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। কারণ, অ্যাপল কর্তৃপক্ষ সেই সময় দাবি করেছিল, সংশ্লিষ্ট নজরদারি সংস্থা ২০২১ সালের মামলা চলাকালীন প্রতিযোগীদের গোপন বাণিজ্যিক তথ্যগুলি প্রকাশ করে দিয়েছিল। যার মধ্যে টিন্ডার-মালিকানা ম্যাচ অন্যতম। অ্য়াপল-এর বক্তব্য ছিল, এই তথ্যগুলি অবশ্যই সংশোধন করা উচিত ছিল।
অ্যাপল-এর পেশ করা এই যুক্তির ভিত্তিতেই সিসিআই সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষকে নির্দেশ দেয়, তদন্ত রিপোর্টগুলি ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তার যতগুলি প্রতিলিপি রয়েছে, সেগুলিও নষ্ট করে ফেলতে হবে। তারপর এই নিয়ন্ত্রক সংস্থার তরফে একটি নতুন রিপোর্ট ইস্যু করা হয়।
রয়টার্স সূত্রে সিসিআই-এর যে অন্তর্বর্তী নির্দেশিকার কথা বলা হচ্ছে, সেই অনুসারে, নভেম্বর মাসে অ্যাপল সংস্থার তরফে আরও একটি অভিযোগ করা হয়েছে। তারা কাঠগড়ায় তুলেছে 'টুগেদার উই ফাইট সোসাইটি' (টিডাব্লিউএফএস) নামে একটি ভারতীয় অলাভজনক সংস্থাকে। মূলত, তাদের অভিযোগ ও আবেদনের ভিত্তিতেই অ্যাপল-এর বিরুদ্ধে এই অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্ত শুরু করা হয়েছিল।
অ্যাপল জানিয়েছিল, সিসিআই-এর নির্দেশ সত্ত্বেও ওই অলাভজনক সংস্থাটি পুরোনো তদন্ত রিপোর্টগুলি নষ্ট করে ফেলার কোনও নিশ্চয়তা প্রদান করেনি। এর জন্য ওই সংস্থার বিরুদ্ধে যাতে পদক্ষেপ করা হয়, সিসিআই-এর কাছে সেই আবেদনও করে অ্য়াপল। একইসঙ্গে, পরবর্তিত তদন্ত রিপোর্টও স্থগিত রাখার আবেদন করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে ১৩ নভেম্বর সিসিআই একটি অন্তর্বর্তী নির্দেশিকা জারি করে। তাতে স্পষ্ট বলা হয় - 'তাদের বিরুদ্ধে চলা তদন্তের রিপোর্ট স্থগিত রাখার যে আবেদন অ্য়াপল কর্তৃপক্ষ করেছে, তা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়নি।'
রয়টার্স সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, এ নিয়ে অ্যাপল কর্তৃপক্ষের মতামত জানার জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, রবিবার পর্যন্ত অন্তত এ নিয়ে বাইরের কোনও পক্ষকে কোনও তথ্য দেয়নি সিসিআই। পাশাপাশি, ওই ভারতীয় অলাভজনক সংস্থার প্রতিনিধিদের ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন তোলেননি।
সিসিআই তাদের তদন্তে জানতে পেরেছে, অ্যাপল কর্তৃপক্ষ বাজারে তাদের যে প্রভাব রয়েছে, তার অপব্যবহার করেছে। যার ফলে অ্যাপ স্টোরে তাদের আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের দ্বারা অ্যাপ ডেভেলপার, ইউজার এবং অন্যান্য পেমেন্ট প্রসেসররা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
কিন্তু, অ্য়াপল কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, তারা কোনও অনিয়ম করেনি। তাছাড়া, ভারতের এই বিপুল বাজারে তাদের অবস্থান এবং প্রভাব নগণ্য। কারণ, বেশিরভার ইউজাররাই মূলত অ্যানড্রয়েড স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন। এবং সেখানে রাজত্ব করে গুগল।
সিসিআই-এর উল্লেখিত নির্দেশিকা অনুসারে, অ্যাপল-কে ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের অডিট করা আর্থিক রিপোর্ট জমা করতে বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট গাইডলাইনের অধীনেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে প্রয়োজনে আর্থিক জরিমানা করা যেতে পারে।
তবে, এক্ষেত্রে আদৌ অ্য়াপল-কে শাস্তির মুখে পড়তে হবে কিনা, তা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট তদন্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর সিসিআই-এর উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা কী সিদ্ধান্ত নেন, তার উপর।