২ থেকে ১৫ ইঞ্চি বরফের চাদর বিছিয়ে রয়েছে মঙ্গলে। তার সঙ্গে ধূলিকণাও পাওয়া গিয়েছে। এরই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা, এই গ্রহের ব্যাপারে আরও একটা এমন রহস্যময় জিনিস জানতে পেরেছেন, যার দরুণ এখানে প্রাণের সম্ভাবনাও ব্যাপক বেড়ে যায়। অর্থাৎ, মঙ্গল গ্রহে গিয়েও হয়ত বেঁচে থাকা সম্ভব বলে আশা দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
পৃথিবীর নিকটতম গ্রহগুলির মধ্যে একটি হল মঙ্গল। এই প্রথম নয়, মঙ্গল গ্রহ অনেক দিন ধরেই বিজ্ঞানীদের আকর্ষণ করে আসছে। এখন বিজ্ঞানীরা এই লাল গ্রহের বরফের অংশে ভিনগ্রহের প্রাণের আশা করছেন। গবেষণার জন্য বহুবার নাসা সহ অন্যান্য মহাকাশ সংস্থাগুলি এখানে মিশন চালিয়ে গিয়েছে। এতদিন পর বেরিয়ে এল আজব খবর।
আসলে, পৃথিবীর মতো মঙ্গলও বাসযোগ্য অঞ্চল হওয়ার কথা। কারণ, উভয়ই সূর্য থেকে এত দূরত্বে বসবাস করে যে এখানে বেঁচে থাকা সাধারণ একটা ব্যাপার। পৃথিবী নিজেই তার প্রমাণ। কিন্তু মঙ্গলে সেই প্রাণের সন্ধান এতদিন পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে মিলেছে ইঙ্গিত।
নতুন এক গবেষণা করে, বিজ্ঞানীদের মনে এক অটুট বিশ্বাস জন্মেছে যে লাল গ্রহের শুষ্ক বরফের নীচে সালোকসংশ্লেষণের মতো প্রক্রিয়া ঘটতে পারে। এর দরুণ বরফের নীচেও জীবনের সন্ধান মেলার সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল।
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কী
উদ্ভিদ, শেওলা এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়া সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সময় রাসায়নিক শক্তি উৎপাদন করে। এর জন্য আবার পর্যাপ্ত পরিমাণে জল এবং সূর্যের আলোর প্রয়োজন। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের অধিকাংশ অক্সিজেন এই সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। আর একটি নতুন গবেষণা অনুসারে, মঙ্গল গ্রহের মেরুগুলির কাছে বরফের ঘন আচ্ছাদন রয়েছে। তাই এর নীচে জীবন থাকলেও থাকতে পারে।
রেডিয়েটিভ হ্যাবিটেবল জোন
আসলে সম্প্রতি, নাসার মার্স অরবিটার, পারসিভারেন্স রোভার, মার্স স্যাম্পল রিটার্ন এবং এক্সোমার্সের মতো মহাকাশযানের বিভিন্ন ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন। সেই প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই বিজ্ঞানীরা এটাও মনে করছেন যে সূর্যের প্রখর তেজ এড়াতে, সালোকসংশ্লেষণ বা অনুরূপ কোনও প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বরফের নীচে জীবন থাকতে পারে। একে বলা হয় রেডিয়েটিভ হ্যাবিটেবল জোন। তবে মঙ্গল গ্রহে গিয়ে বরফের নিচে তদন্ত করলে, তবেই বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: (Driverless Taxi Viral Video: ড্রাইভার ছাড়াই দৌড়োচ্ছে গাড়ি, কেমন অভিজ্ঞতা হল? ভিডিয়ো দেখিয়ে তাক লাগালেন মহিলা)
মঙ্গলে কি সত্যিই বেঁচে থাকা সম্ভব
নাসা জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির গবেষক এবং সহকর্মী আদিত্য খুল্লার এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে 'আমরা এটা বলছি না যে মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তবে আমরা বিশ্বাস করি যে মঙ্গলের ধুলোময় এবং শুকনো হয়ে যাওয়া বরফের চাদরের নীচে প্রাণের সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে তদন্ত করা যাবে।'
এদিকে এটাও জানা গিয়েছে যে মঙ্গলে জল শেষ হয়ে গিয়েছে। কারণ আদিত্য খুল্লার নিজেই বলেছেন যে পৃথিবীর ওজোন স্তরের মতো মঙ্গলে কোনও সুরক্ষা ঢাল নেই। এ কারণে এই ৩০ শতাংশ বেশি অতিবেগুনী রশ্মির প্রকোপ পড়ে, যা জীবনের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
তবে, এত হতাশার মধ্যেই আশা যোগাচ্ছে একটি তথ্য। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে গিয়েছে যে মঙ্গল গ্রহে ২ থেকে ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত বরফের আচ্ছাদন রয়েছে। এতে আবার ০.১ শতাংশ ধূলিকণাও পাওয়া গিয়েছে। এবার বরফ ও ধুলো একসঙ্গে মিশে যাওয়ার কারণে, কিছু কিছু জায়গায় বরফের পুরুত্ব ৭ থেকে ১০ ফুট পর্যন্তও হতে পারে। এর দরুণ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণের প্রভাবও কমে গিয়েছে। এমন অবস্থায় বরফের তলদেশে প্রাণের বিকাশের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।
মঙ্গলে প্রধানত দুই ধরনের বরফ রয়েছে: জলের বরফ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বরফ। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে এই বরফের ধূলিকণা সূর্যের আলোকে বরফ গলিয়ে জলের পুল তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। যদিও, মঙ্গলের পৃষ্ঠে, বরফ গলানো কঠিন কারণ এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল খুব পাতলা, তবে বরফের নীচের ধুলো যথেষ্ট সূর্যালোক পেলে গলে যেতে পারে।
পৃথিবীতে যেমন, বরফে জমে থাকা ধূলিকণা গর্ত তৈরি করে, সূর্যালোককে আটকে রাখে। তারপর বরফ গলিয়ে দেয় এবং ছোট পুল তৈরি করে। প্রাণের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। মঙ্গলেও এমনটা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ফিল ক্রিস্টেনসেন। তাঁর দাবি, পর্যাপ্ত আলো মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠের নীচে তিন মিটার পর্যন্ত পৌঁছে, বরফ গেলে তৈরি ছোট্ট পুলে সালোকসংশ্লেষণের অনুমতি দেয়। এমনটাই বিশ্বাস করে, বিজ্ঞানীরা এখন মঙ্গল গ্রহে এমন এলাকা খুঁজছেন, যেখানে এই ধরনের পুল পাওয়া যেতে পারে।