আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, মহাকাশযান দিয়ে গ্রহাণুতে ইচ্ছাকৃত সংঘর্ষ ঘটাবে NASA। নাসার DART মহাকাশযান ধাক্কা মারবে ডিমরফস নামের এক গ্রহাণুতে।
পৃথিবীর দিক কোনও গ্রহাণু ছুটে এলে তাকে কীভাবে প্রতিহত করা যাবে? নাসার এই অভিযানের বিষয়বস্তু এটিই। ডিমরফস নামের এই গ্রহাণু প্রায় ১.১ কোটি কিলোমিটার দূরে। এর থেকে পৃথিবীর কোনও ক্ষতির বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাই নেই। কেবল গবেষণার স্বার্থেই নাসার এই 'বোমা' মারার পরীক্ষা। গত বছর নভেম্বরে DART মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ এয়ার ফোর্স বেস থেকে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটে যাত্রা শুরু করে ডার্ট। আরও পড়ুন : মহালয়ার পরই বিরল মহাজাগতিক ঘটনা! ৫৯ বছর পর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে বৃহস্পতি আসন্ন
মহাকাশযানের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে যদিও গ্রহাণুটি ধ্বংস হবে না। তবে গতিপথ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। অন্তত পরিকল্পনা এমনটাই। নাসা আসলে দেখতে চাইছে, এভাবে মহাকাশযান দিয়ে 'ধাক্কা মেরে' কোনও গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দেওয়া যায় কিনা। ডিমরফস নামে এই গ্রহাণুটি আসলে একটি বড় গ্রহাণুকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে। তার নাম ডিডিমস। অর্থাত্, অনেকটা যেন ডিডিমসের চাঁদ ডিমরফস। এই ধাক্কা মারার মাধ্যমে ডিমরফসের কক্ষপথ সামান্য বদলে দেওয়া হবে।
২৬ সেপ্টেম্বর ২৩:১২ GMT-তে গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়ার কথা। ভারতীয় সময়ে যা বুধবার ভোর ৪:৪৪ নাগাদ। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই সংঘর্ষের পর্যবেক্ষণ করা হবে।
মহাকাশযানটি ২০,০০০ কিমি/ঘণ্টা বেগে ১৬০ মিটার প্রশস্ত ডিমরফসে সরাসরি ধাক্কা মারবে।
তবে ডিমরফসকে আঘাত করার প্রক্রিয়াটি মোটেও সহজ হবে না। এই দীর্ঘ যাত্রাপথের কেবলমাত্র শেষ ৫০ মিনিটেই মহাকাশযানটি তার লক্ষ্য বস্তুকে আলাদা করে শনাক্ত করতে পারবে। তার আগে পর্যন্ত এটি ডিডিমসের সঙ্গে একে আলাদা করে চিনতে পারবে না। আরও পড়ুন : ঠিক হল না জ্বালানি লিকের সমস্যা, আবারও Artemis I চন্দ্র অভিযান স্থগিত করল NASA
নেভিগেশন সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে সেই চিহ্নিতকরণের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মহাকাশযানের গতিপথ নিয়ন্ত্রিত হবে। তাই পৃথিবীতে বসে নাসা 'টার্গেট' করে ধাক্কা লাগাবে, এমনটি ভাবার কোনও কারণ নেই। কিন্তু এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ না করে সফটওয়্যারে ভরসা কেন?
'এত বেশি দূরত্ব ও এত গতিবেগের কারণে, এভাবে পৃথিবী থেকে এত দূরের মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। লক্ষ্যবস্তু দেখে সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময়ই পাওয়া যাবে না,' জানালেন নাসার ডার্ট প্রোগ্রামের বিজ্ঞানী বলেছেন ডঃ টম স্ট্যাটলার। এ বিষয়ে আরও ব্যাখা করে তিনি বললেন, 'আমাদের এমন সফ্টওয়্যার তৈরি করতে হয়েছিল, যা মহাকাশযানের তোলা ছবি বিশ্লেষণ করতে পারবে। তারপর সেটা দেখে সঠিক লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করে নেবে। এরপর সেটা মেনে থ্রাস্টারগুলি গতিপথ সংশোধন করে ডিমরফসে ধাক্কা মারবে।
কিন্তু ডার্ট সংঘর্ষের তো ধ্বংস হয়ে যাবে। পরীক্ষার ফলাফল তাহলে কীভাবে মিলবে? এর জন্যও রয়েছে ব্যবস্থা। ডার্টের মডিউলের সঙ্গেই একটি ১৪ কেজির ইতালীয় কিউবস্যাট ছিল। কয়েক দিন আগেই সেটা মূল মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এর কাজ হল ডার্টের পুরো সংঘর্ষের বিষয়টি রেকর্ড করা। এই যানটির নাম LiciaCube।
এর মাধ্যমে প্রায় ৫০ কিলোমিটারের নিরাপদ দূরত্ব থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। ফলে নাসার কাছে দুর্দান্ত সব ছবি ও তথ্য চলে আসবে। সংঘর্ষের মাত্র ৩ মিনিট পর তার নিকটতম অবস্থান দিয়ে এই লিসিয়াকিউব চলে যাবে। এর ফলে সংঘর্ষের ফলে ডিমরফসের কক্ষপথ আদৌ ছোট হল কিনা, তা রেকর্ড করা যাবে।