প্রায় কোনও ওষুধই কাজ করে না তার কাছে, ইংরেজিতে বলে মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট, মহাকাশ স্টেশনের বদ্ধ পরিবেশে বেড়ে উঠেছে, মহাকাশ স্টেশনে এমনই একটি ভয়ঙ্কর ব্যাকটেরিয়ার খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নাসার ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়ামস এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) উপস্থিত অন্যান্য আটজন ক্রু সদস্যের জন্য এই ব্যাকটেরিয়া একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। জানা গিয়েছে, এই ব্যাকটেরিয়া নাকি শ্বাসতন্ত্রকে সংক্রমিত করে। আর তাই এভার পৃথিবীতে ফিরে আসছেন সুনিতা উইলিয়ামস। এখনও পর্যন্ত যে তারিখ ঠিক হয়েছে, তাতে ২২ জুন তিনি ফিরছেন পৃথিবীর মাটিতে।
মহাকাশের ধ্বংসাবশেষ এবং মাইক্রোমেটিওরয়েডগুলি আইএসএসের কাছে একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু এখন এই সুপারবাগ স্টেশনের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। আইএসএস-এ সুপারবাগের উপস্থিতি সম্পর্কে, নাসা সম্প্রতি জানিয়েছিল যে এটি এন্টারোব্যাক্টর বুগানডেনসিস নামে পরিচিত এমনই একটি ব্যাকটেরিয়া, যা অনেক ওষুধ দ্বারাই প্রভাবিত হয় না। এই পরিস্থিতি দেখে বলা যেতে পারে যে আইএসএস-এ উপস্থিত এই সুপারবাগগুলি এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
সুপারবাগগুলো কীভাবে মহাকাশে পৌঁছোয়
এই স্পেস বাগ কোনও স্থলজ প্রাণী নয়। এটি পৃথিবীর একটি সাধারণ বাগ যা পৃথিবী থেকে মহাকাশে এসেছে, মহাকাশচারীদের হাত ধরেই। এবং তারপরে এগুলো সেখানে এসে রূপান্তরিত হয়েছিল। নাসা বলেছে যে এটি পৃথিবীতে পাওয়া ব্যাকটেরিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা রূপ ধারণ করেছে এখন।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি মাদ্রাজ এবং নাসা জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির গবেষকরা এই ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে একটি গবেষণা করেছেন। স্টেশনের বিভিন্ন স্থানে এই সুপারবাগের ১৩টি স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে। বাগ যদিও সাধারণ, সর্বত্রই এর চলাচল। কিন্তু আইএসএস-এ তাদের উপস্থিতি আরও বেশি উদ্বেগজনক কারণ আইএসএসের একটি নির্দিষ্ট বায়ুমণ্ডল রয়েছে এবং ওষুধের সুবিধারও সীমিত পরিষেবা রয়েছে। নাসার মতে, ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে এবং অন্যান্য অণুজীবের সঙ্গেই বসবাস করছে।
আরও পড়ুন: (Mars: নিমেষেই ভর্তি হবে ৬০টি বড় সুইমিং পুল! ১৫০,০০০ টন জল রয়েছে মঙ্গলে, নতুন আবিষ্কারে দারুণ প্রকাশ)
সম্প্রতি, ক্যালিফোর্নিয়ার নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির প্রেসিডেন্ট ডক্টর কস্তুরি ভেঙ্কটেশ্বর এই সুপারবাগ সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছেন। বিজ্ঞানীদের মতে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কারও জন্যই জীবন সহজ নয়। এখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের অনেক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, যার কারণে তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পৃথিবীর তুলনায় কম হয়ে যায়।
যদিও এই বিষয়টি মাথায় রেখে আরও একটি নতুন গবেষণা করেছে নাসা। নাসার বিজ্ঞানী ডক্টর কাস্তুরি ভেঙ্কটেশ্বরন বলেছেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে কীভাবে কিছু অণুজীব আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানব প্যাথোজেন, ই. বুগানডেনসিসকে মানিয়ে নিতে এবং বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা চরম পরিবেশে মাইক্রোবিয়ালের উপস্থিতি, আচরণ এবং এগুলোর বেড়ে ওঠার বিষয়গুলো ভালো করে বুঝে, এই ভয়ানক রোগজীবাণু নির্মূল করার জন্য আমাদের সাহায্য করবে। এইভাবে মহাকাশচারীদেরও স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব।