ইতিহাসের প্রাচীনতম সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রাচীন হিন্দু গ্রন্থ ঋগ্বেদে এই সূর্যগ্রহণের উল্লেখ রয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, ঋগ্বেদে উল্লিখিত সূর্যগ্রহণকে সবচেয়ে প্রাচীন বলে মনে করা হয়। প্রায় ৬০০০ বছর আগে এই সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। ঋগ্বেদ প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রচিত হয়েছিল।
ঋগ্বেদ সবচেয়ে প্রাচীন। বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে ঋগ্বেদে উল্লিখিত অনেক ধারণাই, অনেক বেশি পুরনো। সেগুলি আসলে লেখার অনেক আগে থেকেই চিন্তা করা হয়েছিল। ঋগ্বেদে প্রচুর সাংকেতিক ভাষাও ব্যবহার করা হয়েছে। টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের মায়াঙ্ক ভাহিয়া এবং জাপানের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির মিৎসুরু সোমা গবেষণা করে এমনটাই দেখেছেন।
আরও পড়ুন: (Indian Employees: অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় কর্মী প্রযুক্তি শেখার জন্য বসকে ভরসা করে, কী বলছে রিপোর্ট)
উভয় বিজ্ঞানীই ঋগ্বেদে প্রাচীনতম সূর্যগ্রহণের উল্লেখ পেয়েছেন। এই গবেষণাটি জার্নাল অফ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল হিস্ট্রি অ্যান্ড হেরিটেজেও প্রকাশিত হয়েছে। ঋগ্বেদে বর্ণনা করা সূর্যগ্রহণের গল্পটি সাধারণ রাহু কেতুর গল্প থেকে আলাদা। আসলে ঋগ্বেদে সূর্যগ্রহণের আলাদা কারণ দেওয়া হয়েছে। তবে, ঋগ্বেদে উল্লিখিত প্রথম সূর্যগ্রহণের কারণ বোঝার জন্য, ভার্নাল ইকুইনক্স সম্পর্কে জানতে হবে।
ভার্নাল ইকুইনক্স কী
এটি হল সেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের ঘটনা, যখন দিন এবং রাত প্রায় সমান। এই ঘটনাটি বছরে দু' বার ঘটে। একবার মার্চে (বসন্ত বিষুব) এবং দ্বিতীয়বার সেপ্টেম্বরে (শরৎ বিষুব)। বসন্ত বিষুবকালে, সূর্য সরাসরি বিষুবরেখার উপরে থাকে এবং উভয় গোলার্ধে দিন ও রাত সমান হয়। এটি উত্তর গোলার্ধে বসন্তের সূচনা চিহ্নিত করে।
পৃথিবী যেহেতু তার অক্ষের উপর ঘোরে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভার্নাল ইকুনোক্সেরও অবস্থান পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রায় ৪৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এটি ওরিয়নের কাছাকাছি ছিল, কিন্তু ২২৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে এটি প্লেইডেসে চলে গিয়েছিল। ভার্নাল ইকুইনক্স কোথায় ছিল তা দেখেই বিজ্ঞানীরা অনুমান করতে পারেন যে ঠিক কখন প্রথম সূর্যগ্রহণ হয়েছিল।
আরও পড়ুন: (মিশরীয় নার্সের ব্যবহৃত সুগন্ধির সন্ধান, সাড়ে তিন হাজার বছরের ইতিহাস খুঁড়লেন বিজ্ঞানীরা)
ওরিয়ন কী
ওরিয়ন একটি বিশিষ্ট নক্ষত্রমণ্ডল যা রাতের আকাশে দেখা যায়। এটি 'হান্টার' নামেও পরিচিত। উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলির জন্য বিখ্যাত, এই ওরিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট হল তিনটি তারা (মিনটাকা, আলনিলাম এবং আলনিটাক)। ওরিয়ন নক্ষত্রমণ্ডলটি প্রাচীন সভ্যতার বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী এবং কিংবদন্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।
প্লিয়েডস কী
প্লিয়েডসকে 'সপ্তরিশি' বা 'সপ্ত তারা'ও বলা হয়। এটি বৃষ রাশিতে অবস্থিত। এটি সাতটি প্রধান নক্ষত্রের একটি দল, যদিও এতে আরও অনেক তারা রয়েছে, যা সাধারণত খালি চোখে দেখা যায় না।
প্রাচীনতম সূর্যগ্রহণের সময়কাল
উভয় বিজ্ঞানীর গণনা অনুসারে, প্রাচীনতম সূর্যগ্রহণটি হয়েছিল ৪২০২ খ্রিস্টপূর্বের ২২ অক্টোবর, এবং ৩৮১১ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ১৯ অক্টোবরের মধ্যে। কিন্তু আসল তারিখটি এখনও জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তাই তাঁরা বর্তমানে, ঋগ্বেদের ওরিয়ন নক্ষত্রমণ্ডলে ভার্নাল ইকুইনক্সের তারিখ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন, কারণ এই দিনেই প্রথম সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। এটিই প্রথম নথিভুক্ত পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ বলে মনে করা হয়। এই সূর্যগ্রহণের সময় ঋগ্বেদের লেখকরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই সূর্যগ্রহণের ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন: (Piracy Streaming Website closed: ওয়েবসাইট থেকে ফ্রি মুভি দেখা বন্ধ, বড় পাইরেসি স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট সরাল পুলিশ)
পূর্বপুরুষরা কীভাবে সময়কে চিনেছিলেন, তা শেখায় ঋগ্বেদ
ঋগ্বেদ শুধু একটি ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান, তাঁদের চিন্তাভাবনা এবং তাঁদের সময়ের জ্যোতির্বিদ্যা এবং প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কে আজকের জনজীবনকে বুঝতে সাহায্য করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এই ধরনের আবিষ্কারগুলি আমাদের এটাই বুঝতে সাহায্য করে যে আমাদের পূর্বপুরুষরা কীভাবে সময়, স্থান এবং পৃথিবীর ঘটনাগুলি বুঝতে পেরেছিলেন।