একটিমাত্র হোয়াটসঅ্যাপ কল। কলে ওপারে থাকা ব্যক্তির দাবি, ই-সিম সক্রিয় করে দেওয়া হবে। রাজি হতেই ঘটল চরম বিপদ। মহিলার অ্যাকাউন্ট থেকে ২৭ লক্ষ টাকার বেশি তুলে নিল সাইবার অপরাধীরা। ই-সিম সক্রিয় করার নামে বিরাট অঙ্কের টাকা খোয়ালেন নয়ডার এক ৪৪ বছর বয়সী মহিলা।
একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন এই মহিলা। দিল্লি সংলগ্ন নয়ডার সেক্টর ৮২-এর বাসিন্দা তিনি। তাঁর সঙ্গে হওয়া এমন ভয়ানক আর্থিক কেলেঙ্কারির পরে, নয়ডা সেক্টর ৩৬ সাইবার ক্রাইম থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। আইটি আইনের ৩১৮ (৪) এবং ৩১৯ (২) ধারায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে খবর।
ই-সিম কী
ই-সিম হল একটি ডিজিটাল সিম কার্ড, ডিভাইসে এম্বেড করলেই দারুণ সুবিধা পাওয়া যায়। এটি থাকলে নেটওয়ার্কের জন্য আর সিম ব্যবহার করতে হয় না। সিম কার্ড ছাড়াও ফোনে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: (Flipkart Big Billion Days 2024: 20,000 টাকার নিচে আইপ্যাড 9th Gen? – যা জানা দরকার)
প্রতারণার শিকার হলেন কীভাবে
মহিলা পুলিশকে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন যে গত ৩১ অগস্ট, একটি টেলিকম কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার থেকে তাঁর কাছে একটা হোয়াটসঅ্যাপ কল পান। কল যিনি করেছিলেন, নিজেকে কাস্টমার কেয়ার অফিসার হিসাবে পরিচয় দিয়ে, মহিলাকে ইসিম কার্ডের সুবিধাগুলি সম্পর্কে বোঝান, তাঁকে নিজের নম্বরটি ই-সিমে পরিবর্তন করার পরামর্শও দেন। এইভাবে ওই মহিলা একজন সাইবার অপরাধীর ফাঁদে পড়েন। নিজের নম্বরটি ইসিমে পরিবর্তন করতে রাজি হন। ফোনে চলে আসে ওটিপি। বুঝতে না পেরে সাইবার অপরাধীকেই ওটিপিটি জানিয়ে দেন। ফোন কেটে যায়। মহিলার মোবাইল নম্বরও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
এরপরেই ঘটে আসল কাণ্ড। কাস্টমার কেয়ার অফিসার হিসেবে জাহির করা ওই সাইবার প্রতারকদের পরামর্শে, মহিলা পরের দিন অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর, নিজের ই-সিম ডেলিভারি হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। সিম না পেয়ে সে টেলিকম কোম্পানির অফিসিয়াল কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করেন। এরপর গ্রাহক পরিষেবা অফিসার মহিলাকে একটি নতুন সিম কার্ড তোলার জন্য নিকটস্থ দোকানে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন: (ডাইসন অনট্র্যাক হেডফোনগুলি এই তারিখে ভারতে লঞ্চ হবে: সমস্ত বিবরণ এখানে)
প্রতারকরা ২৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে
তিনদিন পরে মহিলা একটি নতুন সিম কার্ড কেনেন। সিম চালু হতেই ফোনে আসে একাধিক মেসেজ। জানতে পারেন যে তাঁর সঙ্গে আর্থিক কেলেঙ্কারি করা হয়েছে। অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এফআইআর-এ মহিলা অভিযোগ করেছেন, প্রতারকরা আমার ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙ্গেছে, দু' টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি করেছে। আমার অজান্তেই আমার নামে ৭.৪০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছে।' একজন অফিসারের মতে, প্রতারকরা একাধিক লেনদেনে প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা চুরি করেছে।
একেই বলে সিম সোয়াপ জালিয়াতি
নয়ডার একজন মহিলার সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই প্রতারণাটিই সিম সোয়াপ জালিয়াতি হিসাবে পরিচিত। এতে, সাইবার অপরাধীরা গ্রাহকের একটি ডুপ্লিকেট সিম হাতিয়ে, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অ্যাক্সেস নিয়ে, তা খালি করে দেয়।
এই জালিয়াতির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়
এমন কল বা মেসেজ পেলে, তা এড়িয়ে যান। এ ছাড়া পাসওয়ার্ড বা ওটিপি ইত্যাদি কখনই কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না। এটি করলেই সাইবার অপরাধী গ্রাহকের ডুপ্লিকেট সিম ইস্যু করতে পারবেন। গ্রাহকের বিদ্যমান সিম কার্ডটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। আর সাইবার অপরাধীর কাছে থাকা সিম কার্ডে গ্রাহকের নম্বর সক্রিয় করা হবে।
মনে রাখবেন, সিম কার্ড ইস্যু করার জন্য আপনার ব্যক্তিগত নথিপত্র প্রয়োজন। অধিকাংশ মানুষ আজকাল না বুঝেই নিজের ব্যক্তিগত নথি যে কারও সঙ্গে শেয়ার করে ফেলছেন। আপনিও যদি এই ভুলটি করে থাকেন তাহলে অবিলম্বে তা করা বন্ধ করুন। কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ, মেসেজ, বা কল পেলে সরকারের চক্ষু পোর্টালে রিপোর্ট করুন। এর দরুণ, সাইবার অপরাধীদের এজেন্সির সরকারের নজরে পড়তে পারে। বড় ধরনের জালিয়াতি প্রতিরোধে করা সম্ভব হতে পারে।