আইনি যুদ্ধে মুখ পুড়ল স্যামসাং-এর। আমেরিকার একটি আদালতের জুড়ি-সদস্যরা পেটেন্ট সংক্রান্ত একটি মামলায় স্যামসাং-এর বিরুদ্ধে রায় দিলেন। সেই মামলায় জিতে গিয়েছে 'নেটলিস্ট' নামে এক কম্পিউটার মেমোরি কোম্পানি।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, এই মামলাটি রুজু করা হয়েছিল স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্স-এর বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, স্যামসাং তাদের অত্যাধুনিক কম্পিউটিং সিস্টেমে যে মেমোরি মডিউল ব্যবহার করছে, তা আদতে নেটলিস্ট সংস্থার প্রাপ্ত পেটেন্টের অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন আমেরিকার আদালতে স্যামসাং-এর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ সত্যি বলে প্রমাণিত হয়। যার জেরে তাদের বিপুল অঙ্কের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
মার্কিন আদালতের সংশ্লিষ্ট জুড়ি সদস্যদের পক্ষ থেকে স্যামসাং-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে - তাদের নেটলিস্ট নামক ওই সংস্থাকে জরিমানা বাবদ ১১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে হবে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স সূত্রে খবর, এই মামলায় জুড়ি সদস্যরা স্যামসাং-এর বিরুদ্ধে যে পর্যবেক্ষণ করেছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। তাতে বলা হয়েছে, স্যামসাং সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে নেটলিস্ট-এর অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
জুড়ি সদস্যদের এই পর্যবেক্ষণ পরবর্তীতে স্যামসাং-এর বিপত্তি আরও বাড়াতে পারে বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। কারণ, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারক জরিমানার আর্থিক অঙ্ক সর্বোচ্চ তিন গুণ বাড়িয়ে দিতে পারেন!
স্যামসাং বনাম নেটলিস্ট মামলা:
২০২২ সালে স্যামসাং-এর বিরুদ্ধে এই মামলা রুজু করেছিল নেটলিস্ট। তাদের বক্তব্য ছিল, ডেটা প্রসেসিং এবং পাওয়ার এফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য তাদের কাছে একটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের পেটেন্ট ছিল।
কিন্তু, স্যামসাং সেই পেটেন্ট অগ্রাহ্য করে এবং তাদের নিজস্ব ক্লাউড কম্পিউটিং এবং অন্যান্য ডেটা-নির্ভর অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মেমোরি মডিউলটি ব্যবহার করতে শুরু করে।
কিন্তু, স্যামসাং নেটলিস্ট-এর এই অভিযোগ অস্বীকার করে। এবং নিজেদের স্বপক্ষে দু'টি পালটা যুক্তি খাড়া করে। প্রথমত, তারা দাবি করে, নেটলিস্ট যে পেটেন্টের কথা বলছে, তা বেআইনি। এবং দ্বিতীয়ত, তারা যে মেমোরি মডিউল ব্যবহার করছে, তা নেটলিস্ট-এর আবিষ্কৃত মেমোরি মডিউলের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
এখানে যে মেমোরি মডিউল চিপ নিয়ে আইনি যুদ্ধ শুরু হয়, তার আবিষ্কার শুরু হয় ২০১৫ সালে। অন্যদিকে, ২০০০ সালে নেটলিস্ট সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন হং চুন-কি নামে এক ব্যক্তি। যিনি এলজি সেমিকন্ডাক্টরের প্রাক্তন কর্মী।
চুন-কি সেমিকন্ডাক্টর সংক্রান্ত প্রযুক্তির একটি বিপুল রেঞ্জ নিজের সংস্থার নামে পেটেন্ট করিয়ে নেন।
দ্য কোরিয়া ইকোনমিক ডেইলি-তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৫ সালে স্যামসাং ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয় নেটলিস্ট-কে।
এই টাকার বিনিময়ে ওই দুই সংস্থার মধ্যে পাঁচ বছরের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি অনুসারে, ওই পাঁচ বছরে দুই সংস্থা যৌথভাবে মেমোরি সলিউশন উৎপাদন করার লক্ষ্য়ে উন্নয়ন ও লাইসেন্স সংক্রান্ত চুক্তি সম্পাদনের কাজ করবে।
এই চুক্তির মেয়ার শেষ হওয়ার পর নেটলিস্ট-এর পক্ষ থেকে তাদের ইন্টেলেকচুয়াল লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করে। কিন্তু, পরবর্তীতে দুই সংস্থার মধ্য়ে সমঝোতা না হওয়ায় সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
এরপরই স্যামসাং-এর বিরুদ্ধে আইনি পথে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয় নেটলিস্ট। একদা বাণিজ্যিক সহযোগীর বিরুদ্ধে পেটেন্ট অধিকার লঙ্ঘন করার অভিযোগ আনে।
অন্যদিকে, স্যামসাং কর্তৃপক্ষ আমেরিকার জেলাওয়্যার প্রদেশে আলাদা করে নেটলিস্ট-এর বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করে। এক্ষেত্রে স্যামসাং-এর অভিযোগ, নেটলিস্ট কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে, প্রযুক্তিগত লাইসেন্স সংক্রান্ত দায়বদ্ধতা লঙ্ঘন করেছে।