কেন দেবতাদের মধ্যে সবার আগে গণেশের আরাধনা করা হয়? জেনে নিন
যে কোনও শুভ কাজ শুরুর আগে সংকল্প করে এবং গণেশকে স্মরণ করা হয়। কোনও কিছু উদ্বোধনের সময়ও অনেকে প্রথমেই 'শ্রী গণেশায় নমঃ' লেখেন। হিন্দু ধর্মে এত দেবদেবী থাকলেও কেন সব দেবতার পুজোর আগে গণেশের আরাধনা করা হয়?
আসলে কোনও পুজো অর্চনা, উপাসনা বা আচার-অনুষ্ঠানে যাতে কোনও বাধা না আসে তার জন্য সবার প্রথমে গণেশ পুজোর প্রথা আছে। কারণ গণেশ হলেন সর্ববিঘ্নহারী, মঙ্গলমূর্তি এবং সিদ্ধিদাতা।
একবার স্বর্গের সমস্ত দেবতার মধ্যে বিরোধ দেখা দিল যে কোন ঈশ্বরের উপাসনা সবার আগে করা উচিত। সমস্ত দেবতা নিজেদের সেরা বলতে শুরু করলেন। নারদ মুনি এই পরিস্থিতি দেখে সব দেবতাদের শিবের আশ্রয়ে গিয়ে তাঁদের এই প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
নারদ মুনির কথা শুনে সমস্ত দেবতারা মহাদেবের স্মরণাপন্ন হন। দেবতাদের মধ্যে এই ঝগড়া দেখে মহাদেব একটি সমাধানের পরিকল্পনা করেন। তিনি একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন।
শিব বলেন সমস্ত দেবতাকে তাঁদের নিজ নিজ বাহনের সঙ্গে পুরো মহাবিশ্ব পরিক্রমণ করে আসতে হবে। এই প্রতিযোগিতায়, যিনি প্রথমে মহাদেবের কাছে পৌঁছবেন তাঁকেই প্রথম উপাস্য হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
সমস্ত দেবতারা তাঁদের বাহন নিয়ে প্রদক্ষিণের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। কিন্তু ভারী শরীরের জন্য গণেশ নিজে বাহন মুষিক-সহ রয়ে গেলেন অনেক পিছনে।
তখন গণেশ ওখান থেকে মাতা-পিতা (শিব-পার্বতী) যেখানে ছিলেন সেখানে গিয়ে তাঁদের তিন বার পরিক্রমা করে ফিরে এলেন।
সবার আগে কার্তিক ময়ূরে চড়ে ত্রিলোক পরিক্রমা করে এসে গণেশকে বসে বসে লাড্ডু খেতে দেখে ভীষণ ক্রুদ্ধ হলেন এবং প্রহার করে গণেশের একটি দাঁত ভেঙে দিলেন। তখন থেকে গণেশ একদন্ত।
গণেশ সকল দেবতার সামনে যুক্তি দিলেন, ত্রিলোকের সকল সুখ সম্পদ মাতা-পিতার চরণে বিরাজমান। মাতা-পিতার চরণের সেবাই সর্বোত্তম। যাঁরা এঁদের চরণ ছেড়ে ত্রিলোক ভ্রমণ করেন, তাঁদের সকল পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে যায়।
এই তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জন্য সেই থেকে অগ্রপূজ্য হয়ে ওঠেন গণেশ। সকল পুজো ও যে কোনও অনুষ্ঠানের আগে তাঁক নিষ্ঠাভরে পুজো করার রীতি প্রচলিত হয়।