মেয়ের মৃতদেহ তিনদিন ধরে আগলে রাখলেন মা। শুধু তাই নয়, মেয়ের মৃতদেহের সঙ্গে কথা বলা এবং এমনকী তাকে খাওয়ানোরও চেষ্টা করেন। অবশেষে বিষয়টি জানাজানি হতেই মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। আর তার কয়েক ঘণ্টা পরেই মৃত্যু হল মায়েরও। এমনই ঘটনা ঘটল বরানগরের একটি আবাসনে। এই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ১ বছর ধরে মায়ের দেহ আগলে রাখল ২ বোন, রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া বারাণসীতে
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবেশীরা দুর্গন্ধ পেয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন যে মেয়ে মৃত অবস্থায় রয়েছে। পুলিশকে তারা খবর দিলে গত বুধবার সেখানে পৌঁছে তরুণীর দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ। তরুণীর মৃত্যু শোক সইতে না পেরে বুধবার দেবীর মৃত্যু হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলার স্বামী একজন ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মী। স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর মহিলা ২০০৬ সাল থেকে বাবা মায়ের সঙ্গে বরানগরের টিএন চ্যাটার্জি স্ট্রিটের কাছে লালবাড়ি অ্যাপার্টমেন্ট থাকছিলেন।
তবে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে কোভিড অতিমারী চলাকালীন। সেইসময় ২০২১ সালে দেবীর অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারী বাবা এবং মা দুজনেই মারা গিয়েছিলেন। তারপর থেকে শুধুমাত্র মহিলা এবং তাঁর মেয়ে অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন। অতিমারী চলাকালীন প্রতিবেশীরা পরিবার চালানোর জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য মা ও মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
মঙ্গলবার বিকেলে দুর্গন্ধ পেয়ে কয়েকজন প্রতিবেশী এ বিষয়ে খোঁজ নিতে দেবীর ঘরে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দেন। দেবী দরজা খুলে মৃত অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকা মেয়ের দেহের কাছে তাদের নিয়ে যান। তিনি তাঁদের বলেছিলেন, মেয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলছে না এবং তিনদিন ধরে কিছুই খাননি। তিনি ভাত এবং ডাল রান্না করে তাঁকে বারবার খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তাঁর মেয়ে মারা গিয়েছেন। এরপর প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে তরুণীর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।
এদিকে, তরুণীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মহিলাও মারা যান। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁকে বরানগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর দেহও ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, মহিলাটি স্কিৎজোফেনিয়া ভুগছিলেন। পুলিশ মৃতদেহের কথা মহিলার স্বামীকে জানায়। কিন্তু, তিনি মৃতদেহ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন।