রাজনন্দগাঁও লোকসভা কেন্দ্রটি ছত্তিশগড় রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লোকসভা কেন্দ্র। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির সন্তোষ পান্ডে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।এবারও তিনি প্রার্থী। বিপক্ষে কংগ্রেসের ভূপেশ বাঘেল যিনি কিছুদিন আগে অবধিও ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এর আগে তিনি দুইবার লোকসভায় যাওয়ার চেষ্টা করলেও হেরে গিয়েছিলেন দুর্গ ও রায়পুর থেকে। এবার হারের হ্যাটট্রিক আটকানোই তাঁর প্রধান টার্গেট।
এবারে এই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলেই মনে হচ্ছে। গত কিছু বছরে এলাকায় বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনা হয়েছে। এতে হিন্দু ভোট অনেকটাই বিজেপির জন্য এককাট্টা হয়েছে। তবে বাঘেল বড় ওবিসি নেতা। তাই তিনি যে সহজে হাল ছাড়বেন না এই প্রধানত গ্রামীণ কেন্দ্র থেকে, সেটা বলাই বাহুল্য। হালের বিধানসভায় এর অন্তর্গত আটটির মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। ফলে সেদিক থেকে স্বস্তিতে আছেন বাঘেল।
১৯৫২ সালের প্রথম লোকসভা নির্বাচনের সময়কাল থেকেই এই কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের দখলে ছিল এই লোকসভা কেন্দ্রটি। প্রথম দুটি লোকসভা নির্বাচনের রাজা বাহাদুর সিংহ এবং শেষ দুটি লোকসভা নির্বাচনে যথাক্রমে পদ্মাবতী দেবী এবং রাম সাহাই পান্ডে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন এই কেন্দ্র থেকে। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে জনতা দলের পক্ষ থেকে মদন তিওয়ারি এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেন। ১৯৮০ এবং ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে শিবেন্দ্র বাহাদুর সিং সাংসদ নির্বাচিত হন।
১৯৮৯ সালে লোকসভায় এই কেন্দ্রটিতে প্রথমবারের জন্য জয়ী হয় ভারতীয় জনতা পার্টি। ধর্মপাল সিং গুপ্তা এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন। ১৯৯১ সালে ফের একবার শিবেন্দ্র বাহাদুর সিং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে অশোক শর্মা বিজেপির পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে জাতীয় কংগ্রেস ফের একবার এই আসনটিতে জয়লাভ করলেও ১৯৯৯ এবং ২০০৪-এর নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির দখলে যায় এই আসনটি। ২০০৭ সালের উপনির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দেবব্রত সিং এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেছিলেন। ২০০৯ সালে বিজেপির পক্ষ থেকে মধুসূদন যাদব, দেবব্রত সিংকে ১৪ শতাংশের কাছাকাছি ভোটে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিজেপি প্রার্থী অভিষেক সিং ৫৪.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভোটের শেয়ার ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং বিজেপির ভোটের শেয়ার প্রায় ৪ শতাংশ হ্রাস পেলেও বিজেপির পক্ষ থেকে সন্তোষ পান্ডে জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থী ভোলারাম সাহুকে ৮ শতাংশ ভোটে পরাজিত করেন।
রাজনন্দগাঁও লোকসভা কেন্দ্রটির অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্র গুলির দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে আটটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতে জয়লাভ করে জাতীয় কংগ্রেস এবং তিনটিতে জয়লাভ করে ভারতীয় জনতা পার্টি। পান্ডারিয়া এবং কাওয়ার্ধা কেন্দ্রদুটিতে বিজেপির পক্ষ থেকে যথাক্রমে ভাবনা বোহরা এবং বিজয় শর্মা জয় লাভ করেন। অন্যদিকে খয়রাগড় এবং ডোঙ্গারগড় কেন্দ্রের দুটিতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী যথাক্রমে যশোদা ভার্মা এবং মিস বাঘেল জয়লাভ করেন। রাজনন্দগাঁও কেন্দ্রে বর্ষীয়ান নেতা রমন সিং বিজেপির পক্ষ থেকে জয়ী হন। ডংগারগাঁও, খুজ্জি এবং মোহলা-মনপুর কেন্দ্রতিনটিতে জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। সার্বিকভাবে বিজেপি এই কেন্দ্রে অ্যাডভান্টেজ পজিশনে থাকলেও লড়াইতে রয়েছে জাতীয় কংগ্রেস।