লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই মারা গেলেন কর্ণাটকের প্রবীণ রাজনীতিবিদ তথা বিজেপির বিদায়ী সাংসদ ভি শ্রীনিবাস প্রসাদ। অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। তখন তিনি লোকজনশক্তির সাংসদ ছিলেন। এই দলিত নেতা কর্ণাটকের রাজস্ব মন্ত্রকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
কর্ণাটকের চামারাজানগর লোকসভা কেন্দ্রের এই সাংসদ বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরেই নানান অসুখে ভুগছিলেন। এরজন্য তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। তারমধ্যেই রবিবার গভীর রাতে বেঙ্গালুরুর মণিপাল হাসপাতালে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বিজেপি এবং কর্ণাটকের রাজনৈতিক মহল। যদিও এবার তাঁকে প্রার্থী করেনি বিজেপি। তবে তাঁর মৃত্যুতে কর্ণাটকে বিজেপির ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: নিজের কেন্দ্রে ভোটের দিন গিয়েছিলেন হাসপাতালে, পরদিনই মৃত্যু BJP প্রার্থীর
জানা গিয়েছে, শ্রীনিবাস বয়স্কজনিত অসুস্থতা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সংক্রমণে ভুগছিলেন। ৪ দিন আগে তাঁকে বেঙ্গালুরুর মণিপাল হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানেই রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ তিনি প্রয়াত হন। শেষ দর্শনের জন্য আজ তাঁর মরদেহ মহীশূরের বাসভবনে রাখা হবে। শ্রীনিবাসের পরিবারে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ভাগ্যলক্ষ্মী এবং তিন কন্যা প্রতিমা প্রসাদ, পূর্ণিমা ও পুনম। প্রায় পাঁচ দশক ধরে সক্রিয় রাজনীতির পর শ্রীনিবাস প্রসাদ গত মার্চ মাসে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
শ্রীনিবাস ২০১৯ সালের নির্বাচনে চামরাজানগর লোকসভা কেন্দ্রে প্রথমবার পদ্ম ফুটিয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন চামরাজানগর কেন্দ্রের প্রথম বিজেপি সাংসদ। উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে শ্রীনিবাস প্রথমবার ‘উট’ প্রতীকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মহীশূরের কৃষ্ণরাজা নির্বাচনী কেন্দ্রে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই সময় ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের নেতারা তাঁর সংগ্রামে মুগ্ধ হন। ১৯৭৪ সালের উপনির্বাচন থেকে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত তিনি মোট ১৪টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এতে তিনি ৬ বার লোকসভা নির্বাচনে এবং দুবার বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন। শ্রীনিবাস আম্বেদকরের চিন্তাধারা এবং দলিতদের হয়ে সংগ্রাম করেছিলেন।
তিনি বিজেপি ছাড়াও কংগ্রেস, জেডি (এস), জেডি (ইউ) এবং সমতা পার্টির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৩ সালে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে পুনরায় বিজেপিতে যোগ দেন। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শরীরে নানান রোগ বাসা বাঁধতে থাকে। গত ২৪ এপ্রিল তাঁকে ওই হাসপাতালে ভরতি করা হয়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, মাল্টি অর্গান ফেলিউরের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য, শ্রীনিবাস ১৯৭২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একজন স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন এবং জন সংঘ এবং অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) সক্রিয় সদস্য ছিলেন। দলিত নেতা ও রাজনীতিবিদ হওয়ার পাশাপাশি তিনি পড়াশোনায়ও বেশ ভালো ছিলেন।