গোয়ায় জুয়ারি নদীর তীরে পূজিত হয়েছে কুমির। মাটি দিয়ে কুমিরের মূর্তি বানিয়ে প্রায় ১ ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলেছে আচার অনুষ্ঠান। কুমিরের আকৃতি বানাতে ব্যবহার করা হয়েছিল শাঁস এবং লাঠি। ফুল ও রং দিয়ে মূর্তিকে সজ্জিতও করা হয়। পানাজির কৃষকরা জুয়ারি নদী এবং কুম্ভরজুয়া খালের ধারে এই বিশেষ পুজো করেছে। মূলত নদীতে মাছ ধরে সংসার চালানো মানুষের সঙ্গে কুমিরের একটি দৈবিক সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন এই গ্রামের মানুষ।
জুয়ারি এবং কুম্ভরজুয়া খালের ধারে বেশ কয়েকটি জায়গা, তামশিরেমের আদুলশেম এবং দেবাতি কাতার থেকে বোমা এবং মারকাইম অঞ্চলের মানুষ নিয়মরীতি মেনে 'মাঙ্গে থাপনে' নামক এই বিশেষ উৎসব পালন করেন। কোঙ্কনি ভাষায়, 'মাঙ্গে' মানে কুমির এবং 'থাপ্ন্নি' বলতে বোঝায় ভেজা মাটিকে আকৃতিতে ঠেলে দেওয়া।
- 'মাঙ্গে থাপনে'র তাৎপর্য
'মাঙ্গে থাপনে', পৌষ মাসের অমাবস্যায় কুমির পুজোর উৎসব। নদীর বাঁধের ধারের কাদা দিয়ে কুমিরের মূর্তি তৈরি করা হয় এই উৎসবে। নৈবেদ্য হিসাবে দেওয়া হয় একটি মুরগি বা মুরগির ডিম, চাল এবং গুড়। এই পুজোয় গ্রামবাসীরা কুমিরের কাছে প্রার্থনা করেন, যাঁরা নদীতে মাছ ধরতে যান, তাঁদের যেন কুমির দেবতা রক্ষা করেন। এইভাবে প্রার্থনার পরে, প্রসাদ হিসাবে নৈবেদ্য বিতরণ করা হয়। এই উৎসবে কোনো পরিবার অনুপস্থিত থাকলে শাস্তি হিসেবে এক থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত তাঁদের মাঠে কাজ করতে হয়। দুই থেকে তিন ঘন্টার এই অনুষ্ঠানটি গ্রামের একটি প্রধান উৎসব। কুমির পুজোর প্রসঙ্গে একজন ৮০ বছর বয়সী গ্রামবাসী জানিয়েছেন, ছোট থেকেই এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি দেখে আসছেন তিনি।
বহু শতাব্দী আগে আদিল শাহের আমলে কুম্ভরজুয়া খালে কুমিরের পুজোর প্রচলন হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ১৬ শতকের পর্তুগিজ ইতিহাসবিদ জোয়াও ডি ব্যারোস মজার চলে কুমিরের 'সমুদ্রের টিকটিকি' বলে উল্লেখ করেছেন। এই অস্বাভাবিক নিয়ম সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে গবেষক সন্দেশ এম গাওয়াস বলছেন, পৌষের শেষ দিনে, অমাবস্যায় (অমাবস্যার দিন) এই বিশেষ অনুষ্ঠানটি বোঝায় যে, আমাদের পূর্বপুরুষরা মিলেমিশে থাকায় বিশ্বাস করতেন এবং প্রকৃতি ও প্রাণীদের সম্মান করতেন। কিন্তু উভয়ের প্রতি এই শ্রদ্ধা ও গুরুত্ব দুঃখজনকভাবে আজকাল হ্রাস পাচ্ছে।'
মনোজ বোরকর, স্বনামধন্য বাস্তুবিজ্ঞানী, যিনি কুম্বারজুয়া খালে ছিনতাইকারী কুমিরের সংরক্ষণের অবস্থার উপর প্রথম গবেষণা করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, যদিও গোয়ার কৃষকরা কুমিরের উপাসনা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এই পশুটির প্রতি সরকার তো উদাসীন। তাই এর জন্য কুমিরের কান্না কাঁদলেই শুধু হবে না। জলবায়ু পরিবর্তন যাতে এই প্রজাতির কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে রাজ্য বন্যপ্রাণী কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এই প্রজাতির সাংস্কৃতিক মূল্যকে সংরক্ষণের প্রচেষ্টা করতে হবে।