মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সপ্তাহব্যাপী উত্তরবঙ্গ সফর শেষ হয়েছে। এই সফরে একাধিক প্রশাসনিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর ভাইপো আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিয়েতেও যোগ দিয়েছিলেন। আবেশ পেশায় একজন চিকিৎসক। কার্সিয়ংয়ে পাহাড়ি শহরের বাসিন্দা দিকসা ছেত্রির সঙ্গে বিয়ে হয়, যিনি নিজেও একজন চিকিৎসক।
এই বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী একটি বিলাসবহুল হোমস্টেতে ছিলেন। তাঁর বাড়ির অন্যান্য অতিথিরা তাজ চিয়া কুটির নামে একটি পাঁচ তারা হোটেলে ছিলেন। দুটোয় জনপ্রিয় মাকাইবাড়ি চা বাগানে অবস্থিত। মুখ্যমন্ত্রীকে অ্যাপ্রোন পরে বাগানে চা পাতা তুলতে দেখা গেছে। তিনি বাগানের কর্মীদের সঙ্গে কয়েক লাইন গান গেয়েছেন এবং নাচের ছন্দে পাও মিলিয়েছেন।
দার্জিলিং-এ একটি সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কয়েক বছর আগেও কার্শিয়াং-এ আমার থাকার জায়গা ছিল না। এখানে শুধুমাত্র একটি সরকারি বাংলো ছিল'। পরিস্থিতি যে আমুল বদলে গিয়েছে, তা মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সফরেরই প্রমাণ।
রাজ্য সরকারের চা পর্যটন এবং বাণিজ্যিক নীতি পরিবেশ-বান্ধব চা পর্যটনের প্রসারে সাহায্য করেছে। চা বাগানের অব্যবহৃত ও পতিত জমিগুলিকে ব্যবহার করার ফলে পাহাড় ও তরাই অঞ্চলে আরও বেশি করে চাবাগান গড়ে উঠেছে। সরকার এখন উত্তরবঙ্গে হোটেল এবং হোমস্টে তৈরির জন্য অনুমতি দিচ্ছে।
রাজ্যে পর্যটন শিল্পের প্রসারে কতটা উদ্যোগী সরকার তা সম্প্রতি কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়ে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন,'রাজ্যে পর্যটনের প্রসারের জন্য আমরা একে শিল্পের মর্যাদা দিয়েছি। আমাদের অনেক চা বাগান আছে। মাকাইবাড়ির চা খুবই জনপ্রিয়। মাকাইবাড়ি চা বাগানে একটি বড় হোটেল হয়েছে এবং বেশিরভাগ সময় এটি ভর্তি থাকে। ইতিমধ্যেই চা পর্যটন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসার জন্য ১৫% চা বাগান ব্যবহার করা হয়েছে। '
এ সংক্রান্ত আইনে বলা হয়েছে, চা পর্যটন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ ১৫০ একক জমির সাপেক্ষে ১৫ % চা বাগানকে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হবে। এই এলাকার মধ্যে সর্বাধিক ৪০% নির্মাণ কার্যের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই আইনে আরও বলা হয়, চা বাগানের আওতাধীন এলাকা কমানো হবে না এবং বাগানে নিয়োজিত বিদ্যমান শ্রমশক্তির ছাঁটাই করা হবে না। নতুন প্রকল্প থেকে এমনভাবে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে যাতে স্থানীয় জনগণের থেকে ৮০% নেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে বিদ্যমান গেস্ট হাউস এবং বাংলোগুলিকে ব্যবহার করা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে বক্তৃতাকালে অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন নেওটিয়া বলেন, 'শিল্পের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে পর্যটনকে দেওয়া হয়েছে। আপনি চা পর্যটন নীতি সম্পর্কে অবগত আছেন। আমাদের গ্রুপের একটি বড় অগ্রগতি ছিল সবচেয়ে বড় মাকাইবাড়ি চা বাগানে একটি তাজ হোটেল স্থাপন করা। আমি মনে করি এটি সেই অঞ্চলে অনেক চা রিসর্ট তৈরির প্রবণতা তৈরি করেছে যা পার্বত্য জেলার অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনবে।'
পাহাড়ের নৈসর্গিক স্থানে গড়ে ওঠা কিছু চা বাগান দ্রুত বিয়ের গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে। মাকাইবাড়ি চা বাগানের তাজ চিয়া কুটির অন্যতম। কাছাকাছি, নিউ চুমতা টি এস্টেটে, মেফেয়ার টি রিসোর্ট দ্রুত ব্যবসা করছে। মহানন্দা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কাছে সবুজ চা বাগানের মধ্যে অবস্থিত রিসর্টটি শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে অবস্থিত যা উত্তরবঙ্গের বাণিজ্য কেন্দ্র। মহানদী, কার্সিয়ং-এর একটু উপরে, মেফেয়ারের জংপানা টি এস্টেটে মেফেয়ার ম্যানর নামে আরেকটি হোটেল রয়েছে।
তবে আশঙ্কাও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা চাষী বলেন,'গত তিন বছরে দার্জিলিং পাহাড়ের অন্তত ২৫টি চা বাগানে হাত বিনিময় হয়েছে এবং যারা চা বাগান নিয়েছে তাদের অধিকাংশই নন-প্লান্টার। আমরা শঙ্কিত যে চা বাগান এবং শ্রমিকদের প্রতি তাদের কতটা টান থাকবে।
তবে আশঙ্কাও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা চাষী বলেন,'গত তিন বছরে দার্জিলিং পাহাড়ের অন্তত ২৫টি চা বাগানে হাত বিনিময় হয়েছে এবং যারা চা বাগান নিয়েছে তাদের অধিকাংশই নন-প্লান্টার। আমরা শঙ্কিত যে চা বাগান এবং শ্রমিকদের প্রতি তাদের কতটা যোগ থাকবে।"
অনেকে মনে করেন, অনেক নতুন নন-প্লান্টার মালিক তাদের স্বার্থকে আরও এগিয়ে নিতে ২০১৯ সালের পলিসির সর্বোত্তম ব্যবহার করবেন যা দীর্ঘমেয়াদে চা শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।