দু’দিন আগেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সারদা চিটফান্ড নিয়ে তথ্য প্রমাণ সিবিআইকে দেবেন বলে হুঙ্কার ছেড়ে ছিলেন। আর দু’দিন পর বাংলায় চিটফান্ড তদন্তের জন্য গঠিত শাখা তুলে নিল সিবিআই। এমনকী এই নিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রধান দফতর থেকে জারি করা হয়েছে নির্দেশিকা। চিটফান্ড তদন্তের জন্য সিজিও কমপ্লেক্সে পৃথক ইউনিট তৈরি করা হয়েছিল। এখানেই সারদা, রোজভ্যালি, আইকোর তদন্তের কাজকর্ম চলত। সিবিআই এই ইউনিট তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জোর আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। তাহলে কি আর চিটফান্ড নিয়ে তদন্ত করবে না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা? উঠছে প্রশ্ন।
ঠিক কী বলা আছে নির্দেশিকায়? নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে, সিজিও কমপ্লেক্সে চিটফান্ড তদন্ত করার জন্য যে আলাদা শাখা খোলা হয়েছিল তাকে ইকোনমিক অফেন্স ব্রাঞ্চের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অসম ও ভুবনেশ্বরেও রোজভ্যালির মামলা চলছিল। সেখানেও অ্যান্টি কোরাপশন ব্রাঞ্চের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে চিটফান্ড তদন্তের শাখাকে। সারদা কাণ্ডে এখনও চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করেনি সিবিআই। রোজভ্যালি মামলাও এখনও ঝুলে আছে। তার মধ্যেই চিটফান্ড তদন্তের শাখা তুলে নেওয়া বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন খোলা হয়েছিল পৃথক ইউনিট? সিবিআই আলাদা ইউনিট খুলেছিল চিটফান্ড তদন্ত যাতে গতি পায়। তারপর চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নিয়েই সমস্ত ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার একটি তালিকা তৈরি করে সিবিআই। সারদা, রোজভ্যালি, এমপিএস–সহ বহু নাম সেই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়। তদন্তে নেমে বহু প্রমাণ পান গোয়েন্দারা।এরপরও বহু চিটফান্ড ব্যবসার ধরন বদলে সক্রিয় ছিল। তখন এইসব বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। সারদা কাণ্ডের এখনও ফয়সালা হয়নি। রোজভ্যালি মামলারও একই অবস্থা। তাই চিটফান্ড তদন্তের পৃথক শাখা তুলে নেওয়ায় গুরুত্ব কমছে বলে অনেকে মনে করছেন।
আরও পড়ুন: ‘অমর্ত্য সেনের জমি কেউ কেড়ে নিতে পারবে না’, সুর সপ্তমে চড়িয়ে মন্তব্য মমতার
আর কী জানা যাচ্ছে? চিটফান্ড কাণ্ড সামনে আসার পর সিবিআই তদন্তের জন্য ২০১৪ সালে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তখন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান এবং সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য মামলা দায়ের করেছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই ওই নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু তাতে এখনও পর্যন্ত সিবিআই বিরাট কোনও কেরামতি দেখাতে পারেনি। বরং সিবিআইয়ের প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমতে শুরু করেছে। একবার বিজেপির সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি দিলীপ ঘোষ সিবিআইয়ের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এবার চিটফান্ড তদন্তে সিবিআইয়ের কাজকর্ম নিয়ে অনাস্থা প্রকাশ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তাঁর বক্তব্য, ‘চিটফান্ড তদন্তের তথ্য ও প্রমাণ আছে। তাও যেভাবে তদন্ত এগোচ্ছে তাতে সিবিআই সম্পর্কে মানুষের অনাস্থা তৈরি হতে বাধ্য।’