আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ। ভোটের হাওয়া আপাতভাবে বোঝা যায় না। কোথাও কোনও দেওয়াল লিখন চোখে পড়ে না দার্জিলিং শহরে। পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। তবে বিমল গুরুংয়ের পার্টি অফিসের ভেতর অবশ্য অন্য ছবি। পার্টি অফিসের ভেতরের ঘরে বসে রয়েছেন বিমল গুরুং। অনুগামীদের ভিড়। একটা সময় তিনিই ছিলেন পাহাড়ের শেষ কথা। গোর্খাল্যান্ডের আবেগকে উসকে দিয়ে কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন পাহাড়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বেপাত্তা ছিলেন। সেই বিমলের সঙ্গে দেখা হল মোর্চার অফিসে।
সিংমারি, পাতলেবাস, লিম্বু বস্তি সহ পাহাড়ের কোণায় কোণায় আজও রয়েছে বিমল গুরুংকে ঘিরে নানা আবেগ। তবে পাহাড়ের মসীহার মুকুটটা আর নেই বিমলের মাথায়, এমনটাই বলেন অনেকে। সেই মুকুট কার্যত উধাও। তবে পাহাড় জুড়ে তাঁর দাপট একেবারে কমে গিয়েছে এমনটা নয়।
মঙ্গলবার দুপুরবেলা। দার্জিলিং শহরে গুরুংয়ের পার্টি অফিসের সামনে জটলাটা ক্রমশ বাড়ছে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে লম্বা করিডোর। মহিলা মোর্চার পরিচিত একাধিক মুখ। পাহাড়ের কিছু উঠতি যুবক ভিড় জমিয়েছেন পার্টি অফিসে। ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন বিমলের ছায়াসঙ্গী রোশন গিরি। মোর্চার রাজনীতিতে ঠান্ডা মাথার মানুষ বলেও পরিচিত। অল্প কথার মানুষ। ভেতরের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসান রোশন গিরি। বিমল গুরুং কোথায়?
রোশন বলেন, ব্যস্ত আছে। খুব ভিড়। আজ হয়তো কথা হবে না। বেশ সাজানো গোছানো পার্টি অফিসের অন্দরমহল। সারি সারি চেয়ার পাতা। মেঝেতে কার্পেট। মহিলা মোর্চার এক নেত্রী মোর্চার পতাকা গোছাচ্ছিলেন। পাহাড়ে মোর্চায় যোগদানের প্রস্তুতি চলছে।
মন দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন শোনেন রোশন। এবারও কি বিজেপি প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান আগের মতোই হবে? রোশন বলেন, প্রত্যাশা করছি। আর বিজেপিকে মোর্চার সমর্থন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের কথা বার বারই বলা হচ্ছে। আর রোশন বলেন, ওই জন্যই তো সমর্থন করলাম।
কথা বলতেই বলতেই ঘরে ঢোকেন বিমল গুরুং। পেটানো চেহারা। মাথায় ঐতিহ্যবাহী টুপি। সংবাদমাধ্য়মকে ঘরে দেখে বিমল বলেন, পরে কথা বলব। এখন নয়।
সেই চেনা দাপট চোখে পড়ে বিমলের।
বিমল গুরুং। পাহাড়ের রাজনীতিতে ঘুরে ফিরে আসে এই নামটাই। আর ভোট এলেই শুরু হয় নানা রাজনৈতিক হিসেব। গুরুং কোন দিকে যাবেন তা নিয়ে নানা জল্পনা ছড়াতে থাকে।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অঙ্কটা ভালোই বোঝেন মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুং। কার্যত পাহাড়ে অঙ্কের পাঠাশালা খুলেছেন বিমল। পাহাড়ের মসীহা থেকে রাজনৈতিক অঙ্কের মাস্টার। কখন কোন দিকে গেলে কতটা লাভ, কতটা ক্ষতি সেই সমীকরণ মনে হয় গুরুংয়ের মতো এতটা ভালো, খুব কম নেতাই বোঝেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, একসময় গ্রেফতারি এড়়িয়ে পাহাড়ে ফেরার জন্য তিনি তৃণমূলের হাত ধরেছিলেন। তার আগে মমতাকে মা বলে সম্বোধন করেছিলেন। আর এবার নিজের জমি ফেরত পেতে গেরুয়ার সঙ্গে ঘুরছেন। তবে শেষ পর্যন্ত গুরুংয়ের অঙ্ক কতটা মেলে সেটাই দেখার।