বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হিংসার প্রতিবাদে এমেরিটাস প্রোফেসরের পদ থেকে অর্থনীতিবিদ অমিত ভাদুড়ি পদত্যাগের পরে জেএনইউ-এর সাম্প্রতিক পরিস্তিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন আরও বেশ কয়েক জন অধ্যাপক।
গত ৫ জানুয়ারি দুষ্কৃতী তাণ্ডবে জেএনইউ-তে ৩৫ জন আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে স্কুল অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক জোয়া হাসান বলেন, ‘৫ জানুয়ারির ওই তাণ্ডব অভূতপূর্ব এবং তার পিছনে প্রশাসনের মদতপুষ্ট দক্ষিণপন্থী দুষ্কৃতীদের স্পষ্ট ভূমিকা ছিল।’
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর হিংসাত্মক হামলার সঙ্গে জেএনইউকাণ্ডের তুলনা টেনে অধ্যাপক হাসান বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে না ডাকতেই পুলিশ ঢুকে পড়ুয়াদের আক্রমণ করে। এখানে গুন্ডারা পুলিশের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে ঢোকে এবং পুলিশ তাদের বাধা দেয়নি। এই গটনাগুলি গণশিক্ষা সম্পর্কে এক ঘোষিত অস্বস্তি তৈরি করে এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। প্রশাসনকে এর কিছু দায় নিতেই হবে। এখন দেখে মনে হচ্ছে, শীর্ষস্তরে পরিবর্তনই একমাত্র এই সমস্যা দূর করতে পারে।’
জেএনইউ উপাচার্য এম জগদেশ কুমারকে লেখা চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সেখানে ‘বৌদ্ধিক বিভাজন’ সৃষ্টি করার জন্য তাঁকেই দায়ী করেন প্রাক্তন এমেরিটাস প্রোফেসর অমিত ভাদুড়ি। তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদের শ্বাসরোধ করতে যে সুপরিকল্পিত ও অশুভ পরিকল্পনা ফাঁদা হয়েছে, তার নীরব দর্শক হয়ে থাকা’ তিনি ‘অনৈতিক’ বলে মনে করছেন।
অধ্যাপক ভাদুড়ি তাঁর চিঠিতে আরও লিখেছেন, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা ধ্বংস করতে প্রশাসনের সাম্প্রতিক চেষ্টার পাশাপাশি আরও বিস্তারিত অশুভ পরিকল্পনা রয়েছে, জেএনইউ প্রধান হিসেবে আপনিও যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। মনে হচ্ছে, বিশ্ব সম্পর্কে আপনার প্রশাসনের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি ব্যবহার করে পড়ুয়াদের সমস্ত জ্ঞানান্বেষণের জানলা আপনি বন্ধ করে দিতে বদ্ধপরিকর।’
অধ্যাপকের লেখা চিঠি পাওয়ার বিষয়ে সোমবার উপাচার্য বলেন, ‘আমার দফতরে এমন কোনও চিঠি এখনও দেখতে পাইনি। এমেরিটাস প্রোফেসর একটি সাম্মানিক পদ এবং তাঁদের অবদান প্রশংসনীয়। তবে তাঁদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তাঁদের প্রতি আমাদের বরাবর শুভেচ্ছা থাকবে।’
জেএইউ-এর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্কুল অফ ফিজিক্স-এর এমেরিটাস প্রোফেসর আর রাজারমন জানিয়েছেন, ‘আমার বন্ধু অধ্যাপক ভাদুড়ির সিদ্ধান্তকে সম্মান করি কারণ পরিস্থিতির বিচারে এটা ওঁর ব্যক্তিগত মত। আমার মত একটু ভিন্ন কারণ ওখানে আমাকে রোজ যেতে হয়, সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়, এবং সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে হয়। বিষয়টি আমার কাছে দৈনন্দিন। বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে আমি মনে করি রোজই ক্যাম্পাসে যাওয়া জরুরি।’
৫ জানুয়ারি মুখোশধারী দুষ্কৃতীরা ক্যাম্পাসজুড়ে তাণ্ডব চালানোর সময় অবশ্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন না অধ্যাপক রাজারমন। তিনি জানিয়েছেন, ‘রোববার ছিল বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইনি। তবে খবর পাওয়ার পরে কাছাকাছি মুনিরকা থেকে সব কিছু লক্ষ্য করেছি। সকলের মতোই আমিও প্রচণ্ড অশান্তিতে ভুগেছি। ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুতর।’