ভারত সহ দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ জুড়ে যখন গরমের দাপটে বেসামাল, তখন বন্যায় কবলে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের একাংশ। দেশটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, দক্ষিণ ব্রাজিলে মারাত্মক বন্যা, কাদা ধস এবং প্রবল ঝড়ের কারণে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বাধ্য হয়েছে। ব্রাজিলের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোর্তো আলেগ্রে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রিও গ্রান্ডে দো সুলের সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত ৭৮ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি এখনও ১০৫ জন ব্যক্তি নিখোঁজ। উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের বেশি শহর প্রবল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সূত্র অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।
বিপর্যয় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা রবিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে উদ্ধারকাজ ও রিহ্যাবিলিটেশনের আলোচনার জন্য মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে রিও গ্র্যান্ডে পরিদর্শনে যান। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সূত্রের খবর। প্রবল বন্যায় রাজ্যটির বেশ কিছু অঞ্চলের সড়ক এবং সেতু সংযোগ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ আপাতত ছিন্ন। পোর্তো আলেগ্রে শহরের গুয়াইবা রিদ লেকের জলের উচ্চতা রেকর্ড মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে এই লেকটির পাড় ক্রমাগত ভেঙে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের জাতীয় ভূতাত্ত্বিক পরিষেবা।
বন্যার কারণে রাজ্যটির বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও অসংখ্য সেতু ধসে পড়েছে। প্রবল ঝড়ের কারণে এই অঞ্চলের একটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে। বেন্টো গনকালভস শহরের একটি পরিখাও আংশিক ধসে পড়েছে বন্যার প্রাবল্যে। গত রবিবার বিকেলে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েন রিও গ্রান্ডে দো সুলের চার লাখেরও বেশি। বন্যার ফলে পানীয় জলের পাইপগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংকটে পড়েন মোট জনসংখ্যার প্রায় একের তিন ভাগ মানুষ। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের গভর্নর এডুয়ার্ডো লেইট সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত কয়েক কয়েক দিনের প্রবল ঝড়, বন্যা ও ভূমিধসের কারণে রিও গ্র্যান্ডে দো সুলের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা যুদ্ধের ক্ষতির সমতুল্য বলা চলে। এ রাজ্যে যুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে।’