এখনও পর্যন্ত বাজারে পেঁয়াজের দাম আয়ত্তের মধ্যে থাকলেও ফের তা লাফিয়ে বাড়তে পারে। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে দামের গ্রাফ। কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে, কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পেঁয়াজ উৎপাদন। ফলে বাজারে বাড়তে পারে পেঁয়াজের দাম।
বৃষ্টির জন্য মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলে নিতে হচ্ছে। তাছাড়া পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য বাংলায় সেভাবে কোনও ঠান্ডা ঘর নেই। ফলে পেঁয়াজ রেখে দেওয়া যায় না। মাঠ থেকে তুলেই তা বিক্রি করে দিতে হয় চাষিকে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা। তাঁরা চাষিদের থেকে কম দামে কিনে তুলনামূলক অনেক বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন: কলকাতায় বেআইনি নির্মাণ রুখতে ‘গার্ড’, পুরনো নিয়ম ফিরিয়ে আনতে চায় পুরসভা
পেয়াঁজ উৎপাদনের খরচ
চাষিরা জানাচ্ছেন, ১ বিঘা জমিতে চাষ করতে দু’কেজি পেঁয়াজের বীজ লাগে। ১ কেজি পেঁয়াজের বীজ মানে, প্রায় আড়াই লাখ বীজ। বাজারে ১ কেজি পেঁয়াজের বীজের দাম ৮০০ টাকা। সেই হিসাবে পেঁয়াজ চাষিদের এক বিঘা চাষ করতে ১৬-১৭ হাজার টাকা খরচ হয়। সেই খরচে বিঘে প্রতি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৩-৩.৫ টন।
কিন্তু মজুত করার ব্যবস্থা না থাকায়, চাষিরা উৎপাদিত পেঁয়াজ বাধ্য হন বাজারে বিক্রি করতে। সেই সুযোগকে কাজ লাগান পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
আরও পড়ুন। ওষুধ কেনার নামে ভুয়ো বিল বানিয়ে টাকা লুটের অভিযোগ NRS-এর কিছু কর্মীদের বিরুদ্ধে
কত দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ?
পাইকারি বাজারে বুধবার ভাল মানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২.৫০ টাকা কেজি দরে। সেই জায়গায় কম মানের পেঁয়াজের দাম ছিল ৬ টাকা থেকে সাড়ে ৬টাকা। সেই জায়গায় চাষিরা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন সাড়ে ৪ টাকা থেকে ৫টাকা দরে। কিন্তু যখন সেই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে এসেছে তখন তা বিক্রি হয়েছে, ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা দরে। দেখা যাচ্ছে বাজারে যে পেঁয়াজ আসছে তাঁর ৭০ শতাংশ খারাপ পেঁয়াজ বাকি ৩০ শতাংশ ভাল পেঁয়াজ।
দাম না পেলে কমবে উৎপাদন
এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তবে আগামী দিনে পেঁয়াজ চাষ কমিয়ে দেবেন চাষিরা, এমনটাই মনে করছেন কৃষি আধিকারিকরা। হার্টি কালচার বিভাগের ডিরেক্টর কমল দে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বৃষ্টির ফলে জমিতে পেঁয়াজ ভিজে রয়েছে। তাই জমি থেকে তোলার পর চাষিরা চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব তা বিক্রি করে দিতে। যার ফলে তাঁরা চার টাকা সাড়ে চার টাকা দরে পিঁয়াজ বেচে দিচ্ছেন।পেঁয়াজ চাষ করে চাষিদের ক্ষতিই হচ্ছে।’ তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে চাষিরা পেঁয়াজ চাষ কমিয়ে দেবেন।
আরও পড়ুন। ইদ পেরলেই গার্ডেনরিচের অলিতে গলিতে যাবেন মেয়র, ইঞ্জিনিয়ার সুরক্ষায় বিশেষ স্কোয়াড
উঠছে ঠান্ডা ঘরের দাবি
কমল দের মতে, রাজ্যে পেঁয়াজ রাখার একটিও ঠান্ডা ঘর নেই। থাকলে হয়তো এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো না চাষিরদের। তাঁদের এই অবস্থার সযোগ নিচ্ছেন পাইকারি ব্যবস্থায়ীরা। তাঁরা কম দামে পেঁয়াজ কিনে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছেন। ঠান্ডা ঘর না হলে এমন পরিস্থিতিই তৈরি হবে বারবার।