দেশের প্রতিটি রাজ্যে গ্রামীণ এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পের কাজ চলছে। অথচ দীর্ঘ ১০ মাস ধরে পানীয় জলের কোনও ব্যবস্থা নেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি গ্রামে। ফলে দীর্ঘ ৬ কিলোমিটার পথ হেঁটেই পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। এই অবস্থায় ওই গ্রামে অবিলম্বে পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে বলল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ তিন সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা শাসককে পানীয় জলের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ইলেকট্রিক মিটার যার, পানীয় জল তার’, পরিশ্রুত জলের সংযোগে বড় সিদ্ধান্ত নবান্নর
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ওই গ্রামের নাম মনমথোনগর। গ্রামটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ব্লকে অবস্থিত। ওই গ্রামে একটি মাত্র টিউবওয়েল ছিল। পানীয় জলের জন্য ওই টিউবয়েলেই ছিল ২০০০ জনসংখ্যা বিশিষ্ট গ্রামবাসীদের একমাত্র ভরসা। তবে প্রায় ১০ মাস আগে সেই টিউবওয়েলটি খারাপ হয়ে যায়। ফলে সমস্যায় পড়েন গ্রামবাসীরা। এখন পানীয় জলের জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রামের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে এই গ্রামের বাসিন্দাদের। আর এর জন্য তাদের যেতে হচ্ছে ৬ কিলোমিটার পথ। প্রতিদিনই এতদূর থেকে পানীয় জল নিয়ে আসতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। এ নিয়ে বিভিন্ন দফতরে নিজেদের সমস্যার কথা জানান গ্রামবাসীরা। কিন্তু, তারপরে কোনও সুরাহা মেলেনি। এমনকী এই বছর তীব্র গরমে পানীয় জলের সমস্যায় ভুগতে হয়েছে স্থানীয়দের।
মামলাকারীর আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরীর বক্তব্য, বিগত কয়েক বছরে এত গরম রাজ্যে পড়েনি। কিন্তু, সেই অবস্থাতেই পানীয় জলের সংকটে ভুগতে হয়েছিল গ্রামবাসীদের। অভিযোগ, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে তারা পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে বি, এসডিও এবং জেলা শাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। এর জন্য তারা চিঠিও দিয়েছিলে। তাদের আবেদন ছিল, হয় গ্রামে টিউবয়েলের ব্যবস্থা করা হোক না হলে বিকল্প কোনও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করতে বাধ্য হন গ্রামবাসীরা।
বিশ্বজিৎ মণ্ডল নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা এই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তাঁর আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায় চৌধুরী যুক্তিতে আদালতকে বলেন, ‘পানীয় জলের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই পানীয় জলের জন্য মানুষকে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করতে হচ্ছে। এমনকী জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার পরেও প্রশাসনের তরফে নির্দিষ্টভাবে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।’ সব শোনার পর প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা শাসককে নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে কেন্দ্রের জল জীবন মিশন প্রকল্পের কাজ শেষ করতে তৎপর জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। কেন্দ্রের এই প্রকল্পে এরাজ্যে ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত শুধু ৩৫ লক্ষ বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত কাজ শেষ করতে চায়ছে রাজ্য সরকার।