রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি হাসপাতাল আর জি করে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের সুপার সন্দীপ ঘোষ সহ রোগী কল্যাণ সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ তুলেছিলেন হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার। এই দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করার পরেই অভিযুক্তদের রোষের মুখে পড়েছেন প্রাক্তন ডেপুটি সুপার। এই ঘটনায় হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শান্তনু সেনের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তাতে ছিলেন আখতার। তদন্তের রিপোর্টে তিনি বেশ কয়েকজনের নামও উল্লেখ করেছেন। তারপর থেকে লাগাতার খুনের হুমকি পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন হাসপাতালের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার তথা রাজ্য হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের আধিকারিক আখতার আলি।
আরও পড়ুন: রোগীদের বিনামূল্যে ব্যথা থেকে মুক্তি দিচ্ছে আরজিকর হাসপাতালের পেইন ক্লিনিক
জানা গিয়েছে, গত ২০ জুলাই তিনি তদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই অভিযোগে তিনি রাজ্য সরকারের দুর্নীতি দমন শাখা, স্টেট ভিজিল্যান্স কমিশন এবং মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক। আমি চাই এর বিচার হোক। সরকারের উপর আমার আস্থা রয়েছে। যাতে কোন রকমভাবে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়া হয়। প্রয়োজনে আমি আদালতে যাব।’ যদিও এ বিষয়ে সুদীপ্ত রায় এবং সন্দীপ ঘোষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান শান্তনু সেনও এ বিষয়ে কোওন মন্তব্য করতে চাননি। এই নিয়ে নতুন করে বিতর্কে আর জি কর হাসপাতাল।
জানা গিয়েছে, গত ১৩ জুলাই ডিআইজির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন প্রাক্তন ডেপুটি সুপার। তিনি জানিয়েছিলেন, সুদীপ্ত রায় রোগী কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালীন নানা ভাবে দুর্নীতি করেছেন। সিঁথি এলাকায় তাঁর নিজের একটা নার্সিংহোম রয়েছে। আর জি কর থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী সুদীপ্ত রায় নিজের নার্সিংহোমে বেআইনিভাবে পাঠিয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, আরও অভিযোগ, আর জি কর মেডিক্যালে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে সমস্ত ভেন্ডার যুক্ত ছিলেন তাদের দিয়েই নিজের নার্সিংহোম সংস্কার এবং বাগানবাড়ি সংস্কার করিয়েছিলেন সুদীপ্ত রায়। আরও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন প্রাক্তন ডেপুটি সুপার। তাঁর অভিযোগপত্রে হাসপাতালে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং হাসপাতালের আরও বেশ কয়েকজন আধিকারিকের নাম রয়েছে। প্রাক্তন ডেপুটি সুপার দাবি করেছিলেন, তিনি এই সমস্ত দুর্নীতির পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাই তাঁকে আর জি কর হাসপাতাল থেকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ মানতে নারাজ সুদীপ্ত রায়। তাঁর বক্তব্য, প্রাক্তন ডেপুটি সুপার নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত।
আখতার অভিযোগ করেছিলেন, আর জি কর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা বর্জ্য কোটি কোটি টাকায় বাংলাদেশের বাজারে পাচার করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে ব্যবহার করা স্যালাইনের বোতল, তার, সিরিঞ্জ, গ্লাভস প্রভৃতি। আখতারের দাবি, তাঁর কাছে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। তাই তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, অধ্যক্ষ সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ২০ শতাংশ কাটমানি খেয়ে প্রচুর বেআইনি কেনাকাটা করেছেন। এছাড়া আরও বিভিন্ন সামগ্রী বেশি দামে কিনেছেন সুপার।