রবিবার, ৩ ডিসেম্বর চিন্নাস্বামীতে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সদ্য সমাপ্ত সিরিজের পঞ্চম তথা শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রোমহর্ষক শেষ ওভারের পর, শেষ হাসি হাসেন সূর্যকুমার যাদবরাই। তবে ১৭তম ওভার থেকেই রোমাঞ্চকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। শেষের চার ওভারেই ছিল রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি। তবে ম্যাচের ১০ ওভারটি নিঃসন্দেহে বিশেষ। ৬ বলে ১০ রান করতে পারলেই যেখানে জিতে যেত অজিরা, সেখানে আর্শদীপ দেন ৩ রান। তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ এক উইকেটও। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৬ বলে ১০ রান করাটা একেবারেই কঠিন বিষয় নয়। বিশেষ করে যেখানে ৩ উইকেট হাতে রয়েছে। কিন্তু সেই অসাধ্যসাধনই করে দেখিয়েছেন আর্শদীপ। সেই সঙ্গে ভারতের ৬ রানে জয় নিশ্চিত করেন তিনি।
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। শ্রেয়স আইয়ার বাদে ভারতের প্রথম সারির ব্যাটাররা এদিন মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন। শ্রেয়সের ৩৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংসটুকুই ছিল ভারতের কাছে বড় পুঁজি। এছাড়া জিতেশ শর্মার ১৬ বলে ২৪ এবং অক্ষর প্যাটেলের ২১ বলে ৩১ রানের হাত ধরে ভারত কোনও মতে ১৬০ রানে পৌঁছেছিল। চিন্নাস্বামীতে এই রান মোটেও আহামরি নয়। এই পিচে টি-টোয়েন্টিতে ২০০ বার তার বেশি রান আকছার হয়। তাই এই রান ডিফেন্ড করাটা ভারতীয় বোলারদের কাছে ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেটা সাফল্যের সঙ্গেই করেছেন মুকেশ সিং, রবি বিষ্ণোইরা।
আরও পড়ুন: শেষ ওভারে বল করতে আসার আগে সূর্যের পরামর্শই চাপ গায়েব করে দিয়েছিল- দাবি আর্শদীপের
অস্ট্রেলিয়ার বেন ম্যাকডারমট ৫টি ছক্কার হাত ধরে ৩৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন। ম্যাকডারমট যখন খেলছিলেন, মনে হচ্ছিল ভারত ম্যাচটি বোধহয় হেরেই যাবে। ১৫তম ওভারের শেষ বলে আর্শদীপ সিং তাঁকে আউট করে ভারতকে অক্সিজেন দেন। এর পর অজি অধিনায়ক ম্যাথিউ ওয়েড যখন ক্রিজে আসেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৩০ বলে ৪৫ রান। পাঁচ উইকেট হাতে থাকায় নিশ্চিত ভাবেই তাদের সামনে ছিল জয়ের বড় সুযোগ। ১৬ ওভার শেষে ২৪ রানে ৩৭ রান দরকার ছিল অজিদের। কিন্তু এর পরই শুরু হয় আসল নাটক।
রং বদলান মুকেশ
১৬তম ওভারে আবেশ খান ৮ রান দিয়েছিলেন। তবে মুকেশ কুমার ১৭তম ওভারে বল করতে এসেই বদলে দেন ম্যাচের রং। এই ওভারে পরপর দু'বলে জোড়া উইকেট নিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরান মুকেশ। প্রথমে ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিতে ম্যাথিউ শর্ট বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে। তার আগের বলেই চার হাঁকিয়েছিলেন তিনি। চতুর্থ ডেলিভারিতে আবার ভারতের স্পিডস্টার বেন দ্বারশুইসকে গোল্ডেন ডাকে বোল্ড করেন। অজিরা পরপর এই ২ উইকেট হারিয়ে ব্যাপক চাপে পড়ে গিয়েছিল। এই ওভারেই ভারতকে লড়াইয়ে ফেরান মুকেশ।
আরও পড়ুন: ১০ ওভারের পরে ছেলেদের বলেছিলাম, এখনও ম্যাচে আছি- রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতে অকপট সূর্য
১৫ রান দিয়ে ভারতকে ডোবান আবেশ
১৭তম ওভারে মুকেশ যে চাপটা অস্ট্রেলিয়ার উপর তৈরি করেছিল, সেটা ১৮তম ওভারে এসে হালকা করে দেন আবেশ খান। তিনি এই ওভারে ১৫ রান দিয়ে বসেন। তাঁকে তিনটি চার হাঁকান ওয়েড। যেখানে ১৭ ওভার শেষে অজিদের ১৮ বলে ৩২ রান প্রয়োজন ছিল, সেখানে তাদের জেতার লক্ষ্য এসে দাঁড়ায় ১২ বলে ১৭ রানে। ফের অজিদের কোর্টেই চলে যায় বল।
১৯তম ওভারে ওয়েডের ক্যাচ মিস, ৭ রান দেন মুকেশ
১৯তম ওভারের প্রথম বলেই ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন মুকেশ কুমার। তখনই শেষ হয়ে যেতে পারত ম্যাচ। কিন্তু ম্যাথিউ ওয়েডের ক্যাচ ফস্কান রুতুরাজ গায়কোয়াড়। মুকেশ শেষ পর্যন্ত এই ওভারে সাত রান দেন। তাঁকে একটি চার মারেন ওয়েড। এর ফলে শেষ ওভারে অজিদের জিততে দরকার ছিল ১০ রান। হাতে ছিল ৩ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এটি সহজতম লক্ষ্য।
বাজিমাত করেন আর্শদীপ
আর্শদীপ সিং শেষ ওভারে বল করতে এসে পুরো বাজি বদলে দেন। শেষ ওভারের পরতে পরতে ছিল নাটক। প্রথম বলটি অজি অধিনায়ক ম্য়াথিউ ওয়েডের মাথার ওপর দিয়ে যায়। নিশ্চিত ওয়াইড। কিন্তু দেননি আম্পায়ার। খেপে লাল হন ওয়েড। আর তাতেই মনঃসংযোগ হারান অজি অধিনায়ক। অর্শদীপের পরের বলে রান হয়নি। তৃতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে শ্রেয়সের হাতে ধরা পড়েন ওয়েড। বাকি তিন বলে হয় ৩ রান। মাঝে পঞ্চম বলে ন্যাথান এলিস স্ট্রেট ডাইভ মেরেছিলেন। আর্শদীপ বলটি ধরতে পারেননি। নিশ্চিত চার ছিল। কিন্তু আম্পায়ারের গায়ে লেগে আটকে যায় বল, হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ভারত। এই চার রান হয়ে গেলে, ভারতের হাত থেকে হয়তো ম্যাচ বেরিয়ে যেত।
অসাধারণ শেষ ওভার। জয়ের জন্য অজিদের ৬ বলে ১০ রান প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মাত্র ৩ রান দেন অর্শদীপ। শেষ ওভারে স্নায়ু ধরে রেখে দুর্দান্ত বল করে ভারতকে ৬ রানে ম্যাচ জেতান আর্শ। সেই সঙ্গে ৪-১ সিরিজ পকেটে পোড়ে সূর্যকুমার যাদবের ভারত।
এই ম্যাচে আর্শদীপ সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোলার ছিলেন। শেষ ওভার বল করতে আসার আগে, তিন ওভারে ৩৭ রান তিনি বিলিয়েছিলেন। তার পরেও তাঁর উপর ভরসা রেখেছিলেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। আর সেই ভরসার যোগ্য মর্যাদা দেন আর্শদীপ।