গত লোকসভা নির্বাচনে আরামবাগ কেন্দ্রে তৃণমূলের জয় নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, আরামবাগে ইভিএম লুকিয়ে রেখে তৃণমূলকে জেতাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলে রাখি, সেই নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী আফরিন আলি ১,১৪২ ভোটে জিতেছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে আর ওই কেন্দ্রে বিদায়ী সাংসদকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল।
কী বললেন শুভেন্দু?
এদিন শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘গতবার চন্দ্রকোনায় ১৬টা মেশিন লুকিয়ে রেখে তপন রায়কে হারানো হয়েছিল। আমি তৃণমূলে ছিলাম ১৯ সালে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসককে ফোন করে ওই ১৬টা মেশিন গুনতে দেননি। অকেজো বলে ঘোষণা করিয়েছেন। আমি তার সাক্ষী। উনি করিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সিট বিজেপিকে জনগণ গতবারই দিয়েছে’।
কী হয়েছিল ২০১৯এর ভোটে?
২০১৯ সালের নির্বাচনে আরামবাগ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আফরিন আলি পেয়েছিলেন ৬,৪৯৯২৯টি ভোট। প্রতিদ্বন্দী বিজেপি প্রার্থী তপন কুমার রায় পেয়েছিলেন ৬,৪৮,৭৮৭টি ভোট। ওই কেন্দ্রে ২০১৪ সালের নির্বাচনের তুলনায় বিজেপির ভোট বেড়েছিল প্রায় ৩২ শতাংশ। সেখানে তৃণমূলের ভোট কমেছিল প্রায় ১১ শতাংশ। আসন্ন নির্বাচনে ওই আসনে মিতালি বাগকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। সেখানে বিজেপি প্রার্থী অরূপ কান্তি দিগর।
বলে রাখি, আরামবাগ লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬টিই হুগলি জেলার অন্তর্গত। শুধুমাত্র চন্দ্রকোণা বিধানসভাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে হরিপাল, তারকেশ্বর ও চন্দ্রকোণা ৩টি বিধানসভায় ২০১৯ সালে তৃণমূলের লিড ছিল। ওদিকে পুড়শুড়া, আরামবাগ, গোঘাট ও খানাকুলে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ৪টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে থেকেও ওই আসনে জিততে পারেনি বিজেপি।
জেলা পরিষদের গণাতেও কারচুপির নালিশ
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগে পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক জেলায় জেলা পরিষদের ভোট গণনাতেও কারচুপির অভিযোগ করেছিলেন শুভেন্দুবাবু। কোথাও বৈধ ব্যালটকে অবৈধ ঘোষণা করে, কোথাও বিরোধী এজেন্টদের গণনাকেন্দ্র থেকে বার করে তৃণমূল একাধিক জেলা পরিষদ দখল করেছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি।
২০১৯ সালে রাজ্যে ১৮টি আসনে জয়লাভ করে বিজেপি। ২২টি আসন পায় তৃণমূল। তার মধ্যে আরামবাগ ও কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল সব থেকে কম। শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের বেশ কয়েকটি আসনের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা তথা একাধিক দফতরের মন্ত্রী শুভেন্দুবাবু। ফলে আরামবাগে গণনায় কারচুপি হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দায়মুক্ত হতে পারেন না তিনি।