নীরবেই চলে গেলেন টলিগঞ্জের জনপ্রিয় পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর স্ত্রী, জয়শ্রী চৌধুরী। কথায় বলে, প্রত্যেক সফল পুরুষের পিছনে একজন নারীর অবদান থাকে, অঞ্জন চৌধুরীর জীবনের সেই নারী ছিলেন তাঁর অর্ধাঙ্গিনী। অঞ্জনের পরিচালক হয়ে ওঠবার পিছনে জয়শ্রী দেবীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
রবিবার, ২১শে অগস্ট প্রয়াত হলেন অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরী ও রিনা চৌধুরীর মা। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই সুগারের সমস্যায় ভুগছিলেন জয়শ্রী চৌধুরী। গত কয়েকদিন ধরে একবালপুরের এক নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন তিনি, গতকাল (রবিবার) মাল্টি অর্গ্যান ফেলিউরের জেরে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর সোশ্যাল সাইটে নিশ্চিত করেন পুত্র সন্দীপ চৌধুরী। তিনি লেখেন, ‘মা চলে গেল না ফেরার দেশে’।
২০০৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হয়েছিলেন অঞ্জন চৌধুরী, এরপর দুই মেয়ে আর ছেলেক আঁকড়েই দিন কেটেছে জয়শ্রী চৌধুরীর। কোনও ফিল্মের চিত্রনাট্যের চেয়ে কম রোমাঞ্চকর নয় তাঁদের প্রেম কাহিনি। স্ট্রাগলার অঞ্জন চৌধুরী পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন জয়শ্রী ঘটককে। কাউকে কিছু না জানিয়ে রেজিস্ট্রি বিয়ে সেরেছিলেন তাঁরা। জয়শ্রীর পরিবার সেই বিয়ে মানেনি। অঞ্জন চৌধুরীর যৌথ পরিবারের এক চিলতে ঘরে সংসার পেতেছিলেন দুজনে। এরপর মায়ের নির্দেশে হিন্দুমতে কালীঘাটে গিয়ে ফের জয়শ্রীর সিঁথিতে সিঁদুর দেন অঞ্জন চৌধুরী।
ইন্ডাস্ট্রিতে জয়শ্রী চৌধুরী পরিচিত ছিলেন ঝুনুদি নামে। অঞ্জন চৌধুরী ঘনিষ্ঠ সকলেই একবাক্যে মেনে নেন ঝুনুদির আত্মত্যাগ ছাড়া অঞ্জন চৌধুরী কোনওদিন সফল হতে পারতেন না। এমনকী ছবি বানানোর নেশায় মত্ত স্বামীর হাতে নিজের গয়না তুলে দিতেও কোনওদিন কুন্ঠাবোধ করেননি।
‘শত্রু’,'গুরুদক্ষিণা’,'ছোট বউ', ‘মেজো বউ’-কত অসংখ্য হিট ছবি বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন অঞ্জন চৌধুরী। দ্য ওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেয়ে চুমকি চৌধুরী মায়ের স্মৃতিচারণা করে জানান, ‘মায়ের অনেক গুণ ছিল খুব ভাল গান গাইতে পারতেন,নাচের তালিম ছিল,ঘর সাজাতে ভালবাসতেন। কিন্তু স্বামী স্ত্রী দুজনেই ক্যারিয়ার গড়তে ব্যস্ত থাকলে বাচ্চাদের কে দেখবে! তাই..’।
একমাত্র অঞ্জন চৌধুরীর পরিচালনাতেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন চুমকি ও রিনা। তার বাইরে কাজের অনুমতি ছিল না। মেয়েদের নাচ শেখাতেন জয়শ্রী দেবী নিজে। তাঁদের অভিনয়ের সবচেয়ে বড় সমালোচকও ছিলেন তিনিই। চুমকি চৌধুরী ওই সাক্ষাৎকারে আরও জানান- ‘মায়ের গুণ গুলো চাপা পড়ে গেছিল কারণ মা চেয়েছিলেন বাবার উন্নতি খ্যাতি নাম যশ আর হাউসফুল সিনেমা হল। গায়ের একটা একটা গয়না খুলে বাবাকে দিয়েছেন। মা না থাকলে বাবা অঞ্জন চৌধুরী হতে পারতেন না।’