ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই। সেই মতো এবার বাইজুস থেকে বাইজু রবীন্দ্রনকে ছেঁটে ফেলতে এনসিএলটি-তে মামলা দায়ের করলেন চার বিনিয়োগকারী। ভারতে অনলাইন পড়াশোনার জগতে যুগান্তারী পরিবর্তন এনেছিল বাইজুস। সেই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বাইজু রবীন্দ্রন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যকে বাইজুস থেকে ছাঁটাই করতে আজ 'এক্সট্রাঅর্ডিনারি জেনারেল মিটিং' বা ইজিএম ডাকা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক মাসে এডটেক সংস্থা বাইজুসের অবস্থা ক্রমেই বেহাল হয়েছে। সংস্থার বাজার দর তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এই আবহে সংস্থার শীর্ষ পদ থেকে বাইজুকে সরাতে চাইছেন বিনিয়োগকারীরা।
অবশ্য, গতকাল কর্ণাটক হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছে, আগামী শুনানি পর্যন্ত বাইজুসর সেই 'ইজিএম'-এ নেওয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হবে না এবং তা কার্যকর করা যাবে না। এদিকে উচ্চ আদালতের এই নির্দেশকে 'হার' হিসেবে দেখতে নারাজ বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের বক্তব্য, আদালত ইজিএম না করার নির্দেশ দেয়নি, বা এটাও বলেনি যে এই ইজিএম বেআইনি। এই আবহে আজ বাইজুসের ইজিএম হচ্ছে। তবে রবীন্দ্রন সেই সভায় অংশ নেননি। এই সবের মাঝেই সংস্থার চার বিনিয়োগকারী এনসিএলটি-তে মামলা করে রবীন্দ্রনকে বাইজুস থেকে সরানোর আবেদন করা হয়েছে। তাদের যুক্তি, সংস্থার শীর্ষে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বাইজু রবীন্দ্রন।
উল্লেখ্য, সংস্থার অন্তত ৬ জন শেয়ারহোল্ডর বাইজুকে সংস্থা থেকে ছাঁটাইয়ের প্রস্তাব পেশ করেছিলেন আগেই। এই আবহে ডাকা হয়েছে ইজিএম বা এক্সট্রাঅর্ডিনারি জেনারেল মিটিং। এর আগে সংস্থার সাধারণ সভায় প্রস্তাব করা হয়েছিল, শুধু বাইজু নয়, সংস্থার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে যে সব কর্তা উচ্চ পদে আছেন, তাঁদের সবাইকে ছাঁটাই করা হোক। পাশাপাশি বোর্ড অফ ডিরেক্টরকেও ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। আর শুক্রবার ইজিএম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এডটেক সংস্থার ৩০ শতাংশের মালিক এক কনসোর্টিয়াম রবীন্দ্রনকে বাইজুস থেকে সরাতে উঠে পড়ে লেগেছে। এই আবহে শুক্রবারের ইজিএম-এ যদি সর্বসম্মতিক্রমে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তো ভালো, না হলে নাকি সেই কনসোর্টিয়ামটি বাইজুসকে এনসিএলটি (ন্যাশনাল কোম্পানিজ ল ট্রাইবুনাল)-তে টেনে নিয়ে যেতে পারে। অবশ্য আপাতত এই ইজিএম-এ নেওয়া সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে না বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট। তবে বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছে যে এই ইজিএম হবে। এদিকে ইজিএম ডাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে 'চ্যান জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ'। বাইজু রবীন্দ্রনের অভিযোগ, ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের এই সংস্থা সহ আরও যারা এই ইজিএম ডেকেছে, তারা নাকি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
উল্লেখ্য, বাইজুর পিছনে অনেকদিন ধরেই পড়েছে ইডি। তদন্তকারীদের দাবি, কোম্পানিটি ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মোট ২৮ হাজার কোটি মূল্যের বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বা এফডিআই পেয়েছে। এদিকে একই সময়ে বিদেশে সরাসরি বিনিয়োগের নামে বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা পাঠিয়েছে। এদিকে বিদেশে বিজ্ঞাপনের নামে সংস্থাটি নাকি ৯৪৪ কোটি টাকা পাঠিয়েছে দেশের বাইরে। তবে কোম্পানিটি ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে সময়মতো তাদের ফিন্যানশিয়াল স্টেমেন্ট তৈরি করেনি এবং অডিটও করায়নি। পরে ২০২২ সালের অডিট রিপোর্টে দেখা যায়, বাইজুস-এর প্রায় ৬ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়। একসময়ে ২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এই সংস্থার দাম ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বিতর্কে জর্জরিত হয়ে। এই সবের মাঝে এবার বাইজু রবীন্দ্রনের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করেছে ইডি। সেই নোটিশ অনুযায়ী, দেশ ছাড়তে বারণ করা হয়েছে বাইজুকে।