বিমান, ট্রেন থেকে শুরু করে ইস্পাত কারখানা ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ব্যবহারের জন্য একটি শুদ্ধ ও কার্যকর বিকল্প জ্বালানি হচ্ছে হাইড্রোজেন৷ এর সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে স্পেনের একটি পুরনো খনিশহর বিশ্বের উদাহরণ হয়ে উঠছে৷
শহরটির নাম পুয়ের্তোলইয়ানো৷ সেখানকার এক সার কারখানায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ ফ্যার্তিবেরিয়া নামে ওই সার কারখানার কর্মকর্তা ডেভিড হেরেরো বলেন, ‘অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য হাইড্রোজেন গুরুত্বপূর্ণ৷ আর আমরা যে সার বিক্রি করি, তা তৈরির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে অ্যামোনিয়া৷'
বর্তমানে পুয়ের্তোলইয়ানোতে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে বছরে ৪০ হাজার টন হাইড্রোজেন উৎপাদিত হচ্ছে৷ এটি পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া নয়৷ হেরেরো জানান, প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে প্রতি টন অ্যামোনিয়া তৈরি করতে দুই মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়৷
সবুজ হাইড্রোজেন সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে উৎপাদন করা হয়৷ কোনও জীবাশ্ব জ্বালানির প্রয়োজন হয় না৷ তবে এখন বছরে যে ৩,০০০ টন উৎপাদিত হচ্ছে তা চাহিদার এক-দশমাংশেরও কম৷
ইবেরড্রোলা ইউটিলিটি কোম্পানির খাভিয়ের প্লাসা বলেন, ‘এটি ইউরোপের এমন সবচেয়ে বড় কোম্পানি৷ এটা ইবেরড্রোলা ও ফ্যার্তিবেরিয়ার মধ্যে একটি পাইলট প্রকল্প৷ আমাদের পরিকল্পনা ২০ মেগাওয়াট থেকে ৮০০ মেগাওয়াটে যাওয়া- পুয়ের্তোলইয়ানো ও পালো দে লা ফ্রন্তেরাতে, যেখানে ফ্যার্তিবেরিয়ার কারখানা আছে৷’
স্পেন হাইড্রোজেনের হাবে পরিণত হচ্ছে৷ জাতীয় হাইড্রোজেন কেন্দ্রে বিষয়টি চোখে পড়ে৷ এটিও পুয়ের্তোলইয়ানোতে অবস্থিত৷ কেন্দ্রের পরিচালক মিগেল আংখেল ফ্যার্নান্দেজ সাঞ্চেজ বলছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে সমর্থনের কারণে এটি সম্ভব হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও অর্থ সহায়তা আছে৷ সে কারণে কাজ আরও দ্রুত এগোচ্ছে৷ এছাড়া স্পেনে অনেক পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি আছে- যা এনার্জি ট্রানজিশন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরেকটি ভৌগলিক সুবিধা৷’
পরবর্তী দুই বছরে স্পেনে আরও বায়ু ও সৌরশক্তি প্রতিষ্ঠান নির্মিত হতে যাচ্ছে৷ এগুলো থেকে ৩৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, যা ২৫টি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সমান৷ তবে এই পরিকল্পনা ও সবুজ হাইড্রোজেন তৈরির পরিকল্পনার সমালোচনাও হচ্ছে৷
পরিবেশকর্মী খাবিয়ের আন্দালুস বলেন, ‘অবশ্যই সেইসব কোম্পানির জন্য এটা ভালো হবে, যাদের আর কোনও বিকল্প নেই৷ কিন্তু স্পেনের জন্য এটা বাবলের মতো, অনেকক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়৷ এবং এ কারণে অনেক জায়গায় বাসিন্দাদের সঙ্গে বিবাদ হচ্ছে৷'
বেশি হাইড্রোজেন মানে বেশি জলের ব্যবহার৷ পুয়ের্তোলইয়ানোর কারখানায় এক কেজি সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন করতে কমপক্ষে নয় লিটার জলের প্রয়োজন হয়৷ আর ঐ জায়গাটা স্পেনের দক্ষিণ অবস্থিত, যেটি খরাপ্রবণ এলাকা৷ আন্দালুস বলেন, ‘একটা চিন্তার বিষয় হচ্ছে আমাদের সবকিছুর জন্য পর্যাপ্ত জল থাকবে কিনা- শুধু এখনকার জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও৷ পূর্বাভাস বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দশকগুলোতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পানি কম পাওয়া যাবে৷'
তবে জাতীয় হাইড্রোজেন কেন্দ্রের ইঞ্জিনিয়ার ও গবেষকদের কাছে জল কোনও সমস্যা নয়৷ মিগেল আংখেল ফ্যার্নান্দেজ সাঞ্চেজ বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ইউরোপে হাইড্রোজেনের পুরো চাহিদা মেটাতে সক্ষম হব, যার পরিমাণ দেড়শো থেকে ১৮০ মিলিয়ন ঘনমিটার৷ প্রতি বছর শুধুমাত্র স্পেনে সেচ কাজে ব্যবহার হওয়া পুকুরগুলো থেকে এই পরিমাণ বাষ্প হয়ে যায়৷’
ফ্যার্তিবেরিয়া সার কারখানা ইতিমধ্যে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে৷ কর্মকর্তা ডেভিড হেরেরো বলেন, ‘সবুজ হাইড্রোজেনের কারণে যে সুযোগ তৈরি হয়েছে আমরা তা কাজে লাগাতে চাই এবং নতুন বাজারে ঢুকতে চাই৷'
এর অর্থ হল, সার প্রস্তুতকারক ফ্যার্তিবেরিয়া তার পণ্য তালিকায় ক্লিন এনার্জি যোগ করতে চাইছে৷ ক্রেতার কোনও অভাব হবে না৷ কারণ স্পেনের রিফাইনারি ও ইস্পাত কারখানাগুলোতে বছরে কয়েকশ হাজার টন সবুজ হাইড্রোজেন প্রয়োজন৷ এছাড়া আরও নতুন শিল্প যোগ হচ্ছে৷ পুয়ের্তোলইয়ানোতেই একটি হাইড্রোজেনচালিত ইস্পাত কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ শিগগিরই এই শহর কয়লা ও খনিজ তেল থেকে হাইড্রোজেনে রূপান্তরের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)