এই যাত্রায় রক্ষা পেল পাকিস্তান, কিন্তু নতুন করে ঘাড়ে চাপলো ঋণের বোঝা। আগামী নয় মাসের জন্য ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নতুন ঋণ পাওয়ার পরে ঋণগ্রস্ততার দিক থেকে চতুর্থ স্থানে পৌঁছাল । ইতিহাস বলছে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এত গভীর অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়নি পাকিস্তান। ৩১ মার্চের তথ্য বলছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণকারী দেশের তালিকায় পঞ্চম স্থানে ছিল পাকিস্তান। দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকার প্রকাশিত হয়েছে এমনই তথ্য। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ভিত্তিক বৈশ্বিক ঋণদাতার সাথে করা স্ট্যান্ড-বাই অ্যারেঞ্জমেন্টের সাহায্যে আগামী নয় মাসে আরও ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পেলে পাকিস্তান এই তালিকার চতুর্থ স্থানে চলে যাবে। চুক্তিটি আইএমএফ বোর্ড দ্বারা এখনও অনুমোদিত না হলেও আশাবাদী ইসলামাবাদ।
আইএমএফ থেকে প্রাপ্ত ঋণের পরিপ্রেক্ষিতে, প্রথম স্থানে আর্জেন্টিনা। লাতিন আমেরিকার এই দেশটি ৪৬ মার্কিন ডলার বিলিয়ন নিয়ে প্রথম স্থানে ছিল, মিশর ছিল ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে, যুদ্ধবিদ্ধস্ত ইউক্রেন ১২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল। ইকুয়েডর এতদিন ৮.২ মার্কিন ডলার বিলিয়ন নিয়ে চতুর্থ স্থানে ছিল এবং পাকিস্তান ছিল পঞ্চম স্থানে। তাদের ঋণের পরিমাণ ছিল ৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সমীকরণের বদল ঘটবে পাকিস্তানের নতুন ঋণগ্রহণের ফলে। ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যগ হয়ে পাকিস্তানের ঋণের পরিমাণ হবে ১০.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে পাকিস্তান ইকুয়েডরকে পেছনে ফেলে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম আইএমএফ ঋণগ্রহীতা হয়ে উঠবে। ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ নানান চ্যালেঞ্জের কারণে নগদ অর্থ সংকটে পড়া পাকিস্তান তীব্র সংকটের মুখোমুখি।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তাঁরা। গত বছরের বিধ্বংসী বন্যা এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের পর পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক। গত বছর পাকিস্তানে বন্যার সময় ১৫০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছিল এমনকি চাষের জমি নিশ্চিহ্ন হয়েছিল ব্যাপক পরিমাণে। এর ফলে বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় পাকিস্তানের।
উল্লেখ্য, গত এক বছরে পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৩৭.৯৭ শতাংশ। সংকটের হিসেবে শ্রীলঙ্কাও তাদের পিছনে। সরকার চালানোর খরচটুকুও জোগাড় হচ্ছে বহু কষ্টে। তবে অবশেষে মোটা অঙ্কের ঋণ মেলায় সেই ছবিটা বদলাবে, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ার মধ্যে আইএমএফের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতার ‘শিরোপা’ পেয়েছে পাকিস্তান।
শ্রীলঙ্কা, নেপাল, উজবেকিস্তান, আর্মেনিয়া এবং মঙ্গোলিয়া সহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ আইএমএফ থেকে কমবেশি ঋণ নিলেও সবার থেকে এগিয়ে পাকিস্তান। পাকিস্তানের অর্থনীতি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে নিন্মমুখী প্রবাহের দিকেই যাত্রা করেছে। নিয়ন্ত্রণহীন মুদ্রাস্ফীতির ফলে দরিদ্র জনগণের ওপর চাপও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ঋণ নিয়ে চাঙ্গা হয়ে পারে কিনা প্রতিবেশী দেশের অর্থনীতি, সেটাই এখন দেখার।