হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদে গোবর্ধন পূজার উৎসব পালিত হয়। এ বছর ২৬ অক্টোবর গোবর্ধন পূজা। ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্য ৫৬ প্রকার ভোগ প্রস্তুত করা হয় এদিন। কিন্তু খুব কম মানুষই জানেন যে গোবর্ধন পর্বত ঋষি পুলস্ত্যের অভিশাপ পেয়েছিলেন, যার কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে। চলুন জেনে নিই এর পেছনে লুকিয়ে থাকা একটি পৌরাণিক কাহিনী।
কিংবদন্তি অনুসারে, পুলস্ত্য ঋষি প্রাচীনকালে তীর্থযাত্রা করার সময় গোবর্ধন পর্বতে পৌঁছেছিলেন, তখন তিনি এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তারপর তিনি দ্রোণাচল পর্বতকে অনুরোধ করলেন যে, তুমি তোমার পুত্র গোবর্ধনকে আমার হাতে দাও, আমি তাকে কাশীতে প্রতিষ্ঠা করব এবং সেখানে তার পূজা করব। দ্রোণাচল এই কথা শুনে দুঃখ পেলেন, কিন্তু গোবর্ধন পর্বত ঋষিকে বললেন যে আমি আপনার সাথে যেতে প্রস্তুত কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। তুমি আমাকে যেখানে রাখবে, আমি সেখানে প্রতিষ্ঠিত হব। পুলস্ত্য গোবর্ধনের এই কথা মেনে নিলেন। তখন গোবর্ধন ঋষিকে বললেন, আমি দুই যোজন উঁচু আর পাঁচ যোজন চওড়া। আমাকে কাশীতে নিয়ে যাবে কীভাবে? তখন পুলস্ত্য ঋষি বললেন যে আমি তোমাকে আমার তপোবল আমার হাতের তালুতে নিয়ে যাব। তারপর গোবর্ধন পর্বত ঋষির সঙ্গে যেতে রাজি হলেন।
পথে ব্রজ বলে একটি স্থান পড়ল, গোবর্ধন ভাবতে লাগলেন যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধার সঙ্গে এখানে আসবেন এবং শৈশব ও কৈশোরের অনেক বিনোদন করবেন। তখন তার মাথায় চিন্তা এলো যে এখানেই থামতে হবে। এই ভেবে ঋষি পুলস্ত্যের হাতে গোবর্ধন পর্বত আরও ভারী হয়ে গেল। যার কারণে ঋষি বিশ্রামের প্রয়োজন অনুভব করলেন। এরপর ঋষি গোবর্ধন পর্বতকে ব্রজে রেখে ঋষি বিশ্রাম নিতে থাকেন। ঋষি ভুলে গিয়েছিলেন যে কোথাও গোবর্ধন পর্বতকে তিনি রাখতে পারবেন না। কিছুক্ষণ পর ঋষি পর্বতটি আবার তুলতে লাগলেন কিন্তু গোবর্ধন বললেন ঋষিবর এখন এখান থেকে কোথাও যেতে পারব না। আমি আগেই বলেছি আমাকে যেখানে রাখবে, আমি সেখানে প্রতিষ্ঠিত হব। তারপর পুলস্ত্য তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করলেও গোবর্ধন পর্বত সেখান থেকে সরেনি।
তখন ঋষি রেগে গিয়ে তাকে অভিশাপ দেন যে, তুমি আমার ইচ্ছা পূরণ হতে দিলে না। অতএব, আজ থেকে তুমি প্রতিদিন তিল-তিল-তিল করে মুছে যাবে। এভাবে একদিন তুমি মাটিতে মিশে যাবে। সেই থেকে গোবর্ধন পর্বত তিলে তিলে তিলে তিলে ক্ষয় হচ্ছে। কথিত আছে যে কলিযুগের শেষ নাগাদ এটি সম্পূর্ণরূপে পৃথিবীতে বিলীন হয়ে যাবে।
দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ইন্দ্রের অহংকার ভাঙার জন্য ও ব্রজবাসীকে রক্ষার জন্য এই পর্বতটিকে নিজের কনিষ্ঠা আঙুলে রেখেছিলেন।