এক সঙ্গে পাঁচ জন সহকারী সুপার করোনায় আক্রান্ত হলেন। ঘটনা ঘিরে হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে গেল সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ওই হাসপাতলে মোট ৮ জন সহকারী সুপার রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনই আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনায় গোটা হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা আক্রান্ত এই পাঁচ জন চিকিৎসক ভ্যাকসিনের দু’টো ডোজই নিয়েছিলেন। তার সত্বেও তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার খবর চাউর হতেই, চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা হাসপাতালে।
এমনিতেই কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা বেহাল দশা উঠে এসেছিল শনিবার। চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলেছেন রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা।
তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতলে এমনই অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, একটাও করোনার বেড ফাঁকা নেই। হাসপাতালের মেঝেতেই রোগীদের ফেলে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকী, জরুরি বিভাগে ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন রোগীরা।
হাসপাতালের চরম দুর্দশা নিয়ে সুপার বলেছেন, একই চ্যানেল দিয়ে একের পর এক রোগী অক্সিজেন নিচ্ছেন। অথচ দশ শয্যার অক্সিজেন পার্লার থাকলেও সবকটি ভরতি।
রোগীদের পরিজনদের অভিযোগ, তাঁদের রোগীদের ঠিকমতো খাবার দেওয়া তো হচ্ছেই না, উপরন্ত পানীয় জল পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, তাঁদের আরও অভিযোগ যে, এরই মধ্যে কারও মৃত্যু হলে, মৃতদের বাড়িতে খবর পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। ফলে, রোগীদের মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই জানতে পারছেন না মৃতের আত্মীয়রা। করোনা আক্রান্ত রোগীদের পরিবারের তরফে এরকম বহু অভিযোগ করা হয়েছে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের সাফাইয়ে শুধু জানিয়েছে, যেহেতু প্রচুর রোগীর চাপ সেজন্য কিছু সমস্যা হচ্ছে। তবে আস্তে আস্তে সমস্যার সমাধান করার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু ওই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে নানান অভিযোগ তুলেছেন রোগীর পরিজনেরা।
শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে ভরতি করানো হয়েছিল আড়িয়াদহের বাসিন্দা প্রতিমা দাস(৫৬)কে। রোগিণীর মেয়ের অভিযোগ, হাসপাতালের তরফ থেকে ন্যূনতম পরিষেবা টুকুও জোটেনি তাঁর মায়ের। এমনকী, তাঁর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলেও সে কথা তাঁকে জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে, যা হওয়ার তাই হয়েছে। হাসপাতালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন প্রতিমাদেবী। মৃতার মেয়ে গৌরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, ‘আমি শুধু জানতে গিয়েছিলাম যে মা কেমন আছেন, আমাকে হাসপাতাল থেকে বলা হল, আপনার মা মারা গিয়েছেন। কিন্তু ডাক্তার কিছু বলেননি বলে বলতে পারছি না। তাঁর অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে একবারও জানায়নি যে তাঁর মায়ের আইসিইউর প্রয়োজন ছিল। মৃতার মেয়ের দাবি, সেটা যদি তাঁকে আগে থেকে জানানো হত তাহলে, তাঁরা অন্যত্র কোনও ব্যবস্থা করতে পারতেন। কিন্তু সেই সুযোগও তাঁরা পাননি বলে অভিযোগ। অবশ্য এই সমস্ত অভিযোগের পরিপেক্ষিতে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের সুপার জানিয়েছেন, এই মুহুর্তে হাসপাতালে রোগীর ভয়ঙ্কর চাপ রয়েছে। তার মধ্যেও আমরা পরিষেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।