‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ সেই মন্ত্র দীর্ঘ বছর ধরে প্রচলিত রয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের বর্ধমানের কাঁকসার মলানদিঘির ভগবানপুরে। এখানে দুর্গাপুজোয় সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন মেলে। যেখানে দেবী দুর্গার আরাধনায় হাত লাগাতে দেখা যায় হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে। তবে থিম বা মূর্তি পুজো নয়, দেওয়ালে দেবীর ছবি এঁকেই হয় আরাধনা। সেই কাজে যৌথভাবে হাত লাগান জগন্নাথ মুখোপাধ্যায়, মিদ্দা সৈয়দ আব্দুল রহিমরা।
আরও পড়ুন: ২২৪ বছরের দুর্গাপুজো, সংস্কৃতি, আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে মিশে আছে ইতিহাস
কাঁকসার ভগবানপুর গ্রাম সারা বছর জনশূন্য থাকে। শুধুমাত্র পুজোর চার দিন আশেপাশের গ্রামের বহু মানুষের সমাগম হয়ে থাকে এই গ্রামে। এই জনশূন্য হওয়ার পিছনে একটি ইতিহাস রয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে ১১৮৯ সালে নাকি এই গ্রামে মানুষের বসবাস শুরু হয়েছিল। তবে বন্যজন্তু এবং দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সেই সময় গ্রামবাসীরা এলাকার চারপাশে বিশাল জলাশয় করেছিলেন স্থানীয়রা। পরে সেখানে একটি দুর্গা মন্দিরও তৈরি করা হয়। তবে তবে মন্দিরে বজ্রপাত হওয়ায় অশুভ শক্তির ভর রয়েছে বলে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল মানুষের মধ্যে। সেই আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে আশেপাশের এলাকায় অর্থাৎ মলানদিঘি এবং লাউদোহরে আশ্রয় নিয়েছিলেন মানুষজন। ফলে ওই গ্রামটি জনশূন্য হয়ে যায়।
প্রায় ৩০০ বছর আগে গুরুচরণ রায় নামে এক ব্যক্তি ওই মন্দিরে গিয়ে পুনরায় পুজো শুরু করেন। তখন থেকেই ওই মন্দিরে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। আর গত ২৫ বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম সম্মিলিতভাবে এই দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছে। এই দুর্গাপুজোতে চার দিন মানুষকে ভুরিভোজ করানো হয়। আর তার ব্যবস্থা করে থাকেন হিন্দু মুসলিম যৌথভাবে। মলানদিঘির পঞ্চায়েত প্রধান পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘বর্তমানে দেশে যে পরিস্থিতি সেই অবস্থায় আমাদের এই পুজো অনন্য সম্প্রীতির বার্তা দেয়।’