এবার হুগলি জেলায় রাসায়নিক কারখানা তৈরির প্রতিবাদে স্থানীয় মানুষজনকে নিয়ে আন্দোলনে নামলেন কৃষকরা। এখানে মিথ্যে কথা বলে জমি নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানে কারখানা গড়ে তোলা হবে বলে জমি দিয়েছিলেন কৃষকরা। কিন্তু পরে তাঁরা জানতে পারেন কারখানা নয়, হবে রাসায়নিক কারখানা। যা শেষ করে দেবে মানুষের জীবন এবং কৃষকদের ফসল। এই কথা কৃষকরা জানতে পারার মধ্যে কেটে যায় ৬ মাস। এই ৬ মাসে রাসায়নিক কারখানার নির্মাণ কাজও শুরু হয়। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, এই রাসায়নিক কারখানা গড়ে উঠলে দূষণ ছড়াবে। তার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চাষের জমি। এই বিষয়টি নিয়ে গ্রামের মানুষ, কৃষক পরিবার এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়। কিন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। তখন আন্দোলনে নামতে হয় তাঁদের। চাপে পড়ে রাসায়নিক কারখানা তৈরির কাজ বন্ধ রাখা করতে হয়। হুগলির পাণ্ডুয়ার হরাল দাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সর্বমঙ্গলা এলাকায় এখন এটাই চর্চার বিষয়।
এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, মুখে যা বলা হয়েছিল কাজে তা করা হচ্ছিল না। রাসায়নিক কারখানার কথা আগে বলা হয়নি। পরে সেটা অন্যভাবে জানতে পারেন কৃষক থেকে স্থানীয় মানুষজন। তখনই এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন তাঁরা। চাষের জমির ক্ষতি এবং পরিবেশের দূষণ বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দেন কৃষকরা। যদিও পাণ্ডুয়ার বিডিও সেবন্তী বিশ্বাস বলেন, ‘ওখানে একটি কারখানা হওয়ার কথা আছে। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি জনশুনানি ছিল। সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ, গ্রামবাসী ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্যরা হাজির ছিলেন। তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। তবে ওখানে কারখানা তৈরি হবে কি না তা বলতে পারব না। পুরো বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।’
অন্যদিকে কৃষকদের বলা হয়েছিল এখানে একটা যন্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হবে। এই বলে জমি নেওয়া হয় বলে কৃষকদের অভিযোগ। কিন্তু যত দিন গড়িয়েছে তত সেই কথার বিপরীতে কাজ শুরু হয়। কৃষকদের সন্দেহ হওয়ায় ওই প্রস্তাবিত কারখানার এক কর্মীর কাছে থেকে বিষয়টি জানতে চান। তখনই সামনে আসে রাসায়নিক কারখানার বিষয়টি। পাণ্ডুয়ার হরাল দাসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সর্বমঙ্গলা এলাকায় পাঁচ একর জমিতে এই রাসায়নিক কারখানার কাজ শুরু হয়। রাসায়নিক তৈরির কারখানা গড়ে উঠলে মঙ্গলা, কুলবাড়ুই, মসুরিয়া, সোনটিকরি এবং ফতেপুর–সহ পর পর গ্রামে দূষণ ছড়িয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই পোস্টার হাতে আন্দোলন শুরু করেন গ্রামবাসী এবং কৃষকরা। তবে এই আন্দোলনে হস্তক্ষেপ করে পাণ্ডুয়া থানার পুলিশ– প্রশাসন।
আরও পড়ুন: রাজ্য সরকারের আয় বাড়াতে পৃথক সেল গঠন, বাজেটের আগে বড় সিদ্ধান্ত নবান্নের
আর কী জানা যাচ্ছে? এই রাসায়নিক কারখানা গড়ে ওঠার প্রতিবাদে আন্দোলনের ঢেউ চরমে ওঠে। গ্রামবাসী অতনু সোরেন, মহম্মদ শাজাহানদের অভিযোগ, ’জমি কেনার সময় রাসায়নিক কারখানার কথা বলা হয়নি। পরে আমরা জানতে পারি এখানে রাসায়নিক কারখানা হবে। আর সেটা হলে এলাকায় দূষণ ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষ সুস্থভাবে বসবাস করতে পারবে না। আমরা তাই রাসায়নিক কারখানা বন্ধ করতে আন্দোলনে নামতে হয়। অন্য কোনও কারখানা হলে এলাকার মানুষ সহযোগিতা করবে এবং কাজ পাবে। পরিবেশ দূষণ থেকে মানুষ বাঁচবে।’