গোটা ভোটপ্রক্রিয়ায় সেভাবে তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। এত কিছু হয়ে গেলেও কেন তিনি নিশ্চুপ ছিলেন, এই নিয়ে এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। সেকারণ, তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীকে নিয়ে রাজনীতির আঙিনায় এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, ৮ দফা ভোট মিটলেও তৃণমূলের এই সাংসদ গোটা ভোট প্রক্রিয়ায় ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন। সম্প্রতি রাজ্য কমিটির কাছে তাঁর নিষ্ক্রিয়তার সম্পর্কিত রিপোর্ট পাঠিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূলের জেলা কমিটি। এরপরেও দিব্যেন্দু দলে থাকবেন কি না, তাই নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছ তৃণমূলের অন্দরে।
এরাজ্যে সদ্য শেষ হয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বার রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। তার সত্বেও তৃণমূল সাংসদের তেমন কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তার এই ‘মৌনব্রত’ ভাবিয়ে তুলেছে শীর্ষ নেতৃত্বকে। অবশ্য দিব্যেন্দু অধিকারীর তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী। তার পরেই শুভেন্দুর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন তাঁর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারীও। এই দুই ভাইয়ের পর মেজো ভাই কী করবেন, তাই নিয়ে এখন চর্চা চলেছে দীর্ঘদিন।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয়ের পর ইতিমধ্যেই অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ নেতাদের বেছে বেছে ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের সাংসদই রয়েছেন অধিকারী বাড়ির এই মেজো ছেলে। তাঁকে নিয়েই এখন কৌতূহলের দানা বেঁধেছে রাজনৈতিক মহলে। শেষে অন্যান্য শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতো দিব্যেন্দুর ভবিষ্যৎ হবে কি না, তা নিয়ে সরগরম হয়েছে রাজ্য রাজনীতি।
এ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্রের বক্তব্য আরও জল্পনা উসকে দিয়েছে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দিব্যেন্দুর প্রসঙ্গে এই মুহূর্তে কোনও কথা বলা অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে। কারণ, তিনি একজন সাংসদ। এরপরই তিনি জল্পনা উসকে দিয়ে বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরেই নিষ্ক্রিয় ছিলেন দিব্যেন্দু। সে বিষয়ে জেলা কমিটি রিপোর্ট তৈরি করে, রাজ্য কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। এবার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা রাজ্য কমিটিই নেবে।’
ভোটের ঠিক আগেই এগরায় অমিত শাহের সভায় উপস্থিত হয়ে চমকে দিয়েছিলেন অধিকারী পরিবারের বড় কর্তা শিশির অধিকারী। অথচ তিনি কাঁথির তৃণমূল সাংসদ। ওদিকে দিব্যেন্দুও তমলুকের তৃণমূল সাংসদ। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের একটি বড় অংশ জানাচ্ছে, গত কয়েকমাস ধরেই দলের কোনও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি দিব্যেন্দু।তিনি যে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন, সেই জল্পনাই বারবার উঠে এসেছে। যদিও দিব্যেন্দু নিজের অবস্থান এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করেননি। তিনি দল ছাড়বেন কি না সে বিষয়ও কোথাও কোনও ঘোষণা করেননি। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, তিনি কি তাঁর সাংসদ পদের মেয়াদ পূর্ণ করবেন, নাকি তাঁর ভবিষ্যতও অন্যান্য শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের মতনই হবে। নাকি তিনি গেরুয়া শিবিরে যোগ দেবেন। এই নিয়ে দিব্যেন্দুর পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পদ্ম শিবিরও। অবশ্য এই নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ বিজেপি নেতারা। আর অন্য দিকে, দিব্যেন্দু তরফেও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে দিব্যেন্দুর পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই তাকিয়ে আছে রাজনৈতিক মহল।