চাকরি বাতিলের পর টাকা ফেরত চাওয়ায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এক এজেন্টের সঙ্গে জীবনকৃষ্ণ সাহার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে উঠে এল সেই তথ্য। মঙ্গলবার এই রকম ২টি চ্যাট প্রকাশ্যে এনেছে সিবিআই। যার একটিতে জীবনকৃষ্ণ দাবি করছেন, চাকরি বিক্রির কারবারের কথা জানত পুলিশও।
গত এপ্রিলে বাড়িতে সিবিআই তল্লাশির সময় নিজের মোবাইল ফোন দুটি বাড়ির পিছনের পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। ৩ দিন তল্লাশি চালিয়ে সেই মোবাইল ফোনগুলি উদ্ধার করে পুলিশ। ফরেন্সিক তদন্তের মাধ্যমে তার থেকে বার করা হয় সমস্ত তথ্য। সেই তথ্যভাণ্ডার থেকে ২টি চ্যাট প্রকাশ্যে এনেছে সিবিআই। গত বছর ১১ ও ১৮ অক্টোবরের দুটি চ্যাটে চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ায় জীবনকৃষ্ণের কাছে টাকা ফেরত চাইছেন এজেন্টরা।
১১ অক্টোবরের চ্যাটে এক ব্যক্তি প্রাথমিকের চাকরি বাতিল হয়ে যাওয়ায় জীবনকৃষ্ণের কাছে ১২ লক্ষ টাকা ফেরত চান। সেখানে জীবনকৃষ্ণকে বলতে শোনা যাচ্ছে,
চাকরিপ্রার্থী - স্যার আপনি টাকাটা রিটার্ন করবেন বলেছিলেন।
জীবনকৃষ্ণ - হ্যাঁ দেব। এখন তোমাকে ৬ দেব। বাকিটা পরে দেব।
- পরে কবে স্যার?
- দেখে নিচ্ছি কবে। কিছু জমি বিক্রির চেষ্টা চলছে।
- স্যার আপনি একবারে দেবেন বলেছিলেন।
- একবারে দেব বলেছিলাম। সবাইকে অর্ধেক করে দিচ্ছি। তোমারটা এমন কিছু নয়। তুমি ১২ দিয়েছো। একজন ১৭ পাবে। তাকে ৭ দিতে হবে। আসানসোল, সিউড়ি থেকে ১৭ – ১৮ করে সবাই দিয়েছিল। বেশি খিটমিট করলে কিছুই দেব না। যা পারবে করে নেবে।
- না না স্যার। সে আমি আর কী করব?
- আমিই একমাত্র টাকা ফেরত দিচ্ছি। আর তো ওপরে কেউই দেয় না। আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। পুলিশ বলেছে আপনি তো টাকা নিতে যাননি। আপনার বাড়ি এসে টাকা দিয়ে গিয়েছে। আপনি চুপচাপ বসে থাকুন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি আপনার বিরুদ্ধে FIR করে দেব।
চ্যাটে স্পষ্ট, চাকরির বিনিময়ে টাকা লেনদেনের ব্যাপারে অবগত ছিল স্থানীয় পুলিশও।
১৮ অক্টোবরের চ্যাটে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে শোনা যায় জীবনকৃষ্ণকে। তিনি বলেন,
- স্যার, ১৮৩ জনের বাতিল তালিকায় আমার নাম আছে।
- পাঠাও দেখি
- কঠিন সমস্যা। মান সম্মান নিয়ে টানাটানি হচ্ছে।
- ঠিক আছে। চুপচাপ থাকো।
- স্যার আমার টাকার দরকার। চারিদিকে খুব চাপ।
- তোমাকে অর্ধেক দিয়েছি। বাকি টাকার জন্য ধৈর্য ধরতে হবে। আমাকে বার বার ফোন করলে অ্যারেস্ট হয়ে যেতে পারো।
- অ্যারেস্ট হওয়ার ভয় নেই।
- অ্যারেস্ট হওয়ার ভয় না থাকলে আজই চলে এসো। দম থাকলে এসো।
- আর উপায় কী স্যার। ভয় তো আছেই। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি।
- আমি ওই সব অনুরোধ শুনি না। যা বলি তাই করি। ফলে চুপচাপ থাকো।
নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতারির পরই নিজেকে বারবার নির্দোষ বলে দাবি করেছেন জীবনকৃষ্ণ সাহা। এমনকী তাঁকে এখনো বিধায়ক পদে ইস্তফা দিতে বলেনি তৃণমূল।