মধ্যপ্রদেশে নজরকাড়া সাফল্যের জন্য বিজেপির অনেকেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে কৃতিত্ব দিতে চাইছেন। বিশেষ করে গোয়ালিয়র-চম্বল এলাকায় কংগ্রেসের সমস্ত আশাকে ধূলিসাৎ করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের মতো তারা মধ্যপ্রদেশে ‘ক্লিন সুইপ’ দেখতে চেয়েছিল।
সিন্ধিয়ার বিদ্রোহের ফলে জেতার মাত্র ১৫ মাসের মাথায় পতন হয় কমলনাথ সরকারের। ২০২০ সালের মার্চে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তার পর এটিই ছিল প্রথম বিধানসভা নির্বাচন। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার ক্ষেত্রেও তাই।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, কংগ্রেস এই মধ্যপ্রদেশের ৩৪টি আসনের মধ্যে ২৬টিতে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু ১৫ মাস পর সিন্ধিয়া তাঁর ২২ জন অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় রাজ্যে সরকার বদল হয়। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর রাজ্য ক্ষমতায় আসে বিজেপি।
দলের একজন নেতার কথায়, এক গুচ্ছ বিধায়ক এক সঙ্গে কংগ্রেস ছাড়ায় রাজ্যে উপনির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ২০২০ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত এই উপনির্বাচনে সিন্ধিয়া তার নেতৃত্বের প্রমাণ দেন। গোয়ালিয়র-চম্বল এলাকায় ১৬টি আসনের মধ্যে ৯টি আসন পায় বিজেপি।
তিনি বলেন, এই ঘটনার পর থেকে সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যায় কংগ্রেস। তারা বলে, তার জন্য দলকে ভাঙাতে পেরেছে বিজেপি। এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। রাজ্যের ফের ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। শুধু তাই নয়, ওই গোয়ালিয়র-চম্বল এলাকাতেও ভাল ফল করেছে তারা।
(পড়তে পারেন। মধ্যপ্রদেশে BJP-র ‘বি টিম’, ৩ রাজ্যে হারে কংগ্রেসের ‘একগুঁয়ে’ মনোভাবই দায়ী: বিজয়ন)
এই এলাকার সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বিজেপি প্রার্থী নরেন্দ্র সিং তোমর মোরেনা জেলার দিমনি আসন থেকে জয়ী হয়েছেন। আসনটি বিজেপির জন্য সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসনগুলির মধ্যে অন্যতম। যেখানে কংগ্রেস প্রার্থী এবং বিরোধী নেতা গোবিন্দ সিং হেরেছেন। যিনি আবার সিন্ধিয়ার অন্যতম বড় সমালোচক। তার বাড়ি ভিন্দ জেলার লাহারে। একইভাবে, বিজেপি প্রার্থীরা এই অঞ্চলের ২০ টিরও বেশি আসনে এগিয়ে ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ওই এলাকার দাতিয়ায়, কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী একটি নির্বাচনী সমাবেশে সিন্ধিয়ার উপর তীব্র আক্রমণ করেন এবং তাঁকে নানা বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করেন।
মধ্যপ্রদেশে বিজেপির বিপুল জয় দেখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিন্ধিয়া বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিশাপ, গালাগালি এবং অপমানজনক শব্দ আমার বুকে নিয়েছি। আমি কখনো পাল্টা আক্রমণে লিপ্ত হইনি। আমি সবসময় বলেছি যে জনগণ এর উপযুক্ত জবাব দেবেন। আগেও গোয়ালিয়র-চম্বল এলাকার লোকেরা উপনির্বাচনে তাদের (কংগ্রেস) উপযুক্ত জবাব দিয়েছিলেন এবং তাঁরা এই বিধানসভা নির্বাচনেও একই কাজ করেছেন।’
ভোটের আগে সিন্ধিয়া ২৩০ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১৫০টিতে যান এবং প্রায় ১০০ জনসভায় বক্তব্য রাখেন। দলের প্রচারে কার্যত গোটা রাজ্য চষে বেরিয়ে ছিলেন তিনি।
জয়ের পর, রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র পঙ্কজ চতুর্বেদী বলেন, ‘কংগ্রেসকে এখন বুঝতে হবে যে ২০১৮ সালে দলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াজি থাকায় গোয়ালিয়র-চম্বল একালায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করে। এখন, বিজেপি এই অঞ্চলের ৩৪টি আসনের মধ্যে ২৮টিতে এগিয়ে রয়েছে। এই জয়ই বলে দেয় নেতা হিসাবে ওই এলাকায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতার কথা।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী না করে কংগ্রেস তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘকতা করেছে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেস তারপরও তাঁকে আক্রমণ করতে থাকে। উপনির্বাচনের পর কংগ্রেসকে মানুষ আবার একটা পাঠ দিল।’
প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র জেপি ধানোপিয়া বলেন, ‘আমরা এই সন্ধিক্ষণে গোয়ালিয়র-চম্বল এলাকা বা রাজ্য বা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’