প্রশান্ত ঝা
২০০০ সালে গঠিত হওয়ার পর ছত্তিশগড় তিন বছরের জন্য কংগ্রেসকে বেছে নেয়। তার পর বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮ বছর পর্যন্ত বিজেপিকে তার লালন-পালনের জন্য বেছে নেয়। তার তারুণ্যে কংগ্রেস পাঁচ বছরের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। তবে রাজ্য তার বিকাশের পর্যায়ে ফের বিজেপিকে বেছে নিল।
এর আগে ভোটারা কংগ্রেসকে দীর্ঘসময় শাসনের জন্য বেছে নেয়নি। তারা বিশ্বাস করেনি যে কংগ্রেস রাজ্যের বিকাশের সক্ষম। উল্লেখযোগ্য ভাবে রাজ্যটি পার্শ্ববর্তী রাজ্য মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে লাগোয়া। যা কিনা একসময় কংগ্রেসের ঘাঁটি ছিল।
তা সত্বেও ২০১৮ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠা নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে ভুপেশ বাঘেলের নেতৃত্বে কংগ্রেস। তিনি চাইলে রাজ্যে দলের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তিনি মন দিলেন দিল্লির সংবাদমাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরতে এবং দলের নেতৃত্বকে খুশি করতে। ফলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে নজর দিতে ব্যর্থ হন। যে সামাজিক জোট তাঁকে ক্ষমতায় আনে।
এই সামাজিক জোটের দুটি মূল উপাদান ছিলে। তার প্রথমটি হল রাজ্যেপ উত্তর ও দক্ষিণে কেন্দ্রীভূত আদিবাসী অঞ্চল। দ্বিতীয়টি সমতলের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী। রবিবার ফল বলছে, যা বিজেপির দিকে সরে গিয়েছে।
আদিবাসীদের জন্য, বাঘেল ছিলেন একজন ওবিসি নেতা। যিনি দক্ষিণের বস্তার অঞ্চল বা উত্তরের সারগুজা অঞ্চলকে কিছুই দেননি। স্পষ্টভাবে যা এই দুই অঞ্চলের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
সরকারের মাঝপথে টিএস সিং দেওকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু দল সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
টিএস সিং দেও উত্তরের একজন রাজপুত নেতা। তিনি ২০১৮ সালে দলের সভাপতি থাকাকালীন কংগ্রেসকে রাজ্যের তখতে বসাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মাওবাদী বিরোধী অভিযান ও অন্যান্য সমাজ কল্যাণমূলক বিষয়গুলির প্রতি সংবেদনশীলতার জন্য আদিবাসীদের তাঁর জনপ্রিয়তা বাঘেলের থেকে বেশি ছিল।
কিন্তু ভোট না পেলেও বিজেপি আদিবাসী এলাকায় তাদের কাজ চালিয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ তারা ওই সব এলাকায় আসন না পেলে জনসংযোগের কাজ তারা বন্ধ করেনি।
একই সময়ে, বাঘেল যখন নিজের এবং ছত্তিশগড়ের জন্য একটি ওবিসি-কেন্দ্রিক পরিচয় তৈরি করতে চেয়েছিলেন, তখন পিছিয়ে থাকা সম্প্রদায়ের মধ্যেই তা নিয়ে ভিন্নতা প্রকাশ পায়। বাঘেল একজন কুর্মি, কিন্তু সাহুরাই রাজ্যের মধ্যে একক বৃহত্তম ওবিসি বক্ল। এই আসনটি ঐতিহ্যগতভাবে বিজেপির সঙ্গে ছিল কিন্তু ২০১৮ সালে সেই আনুগত্য স্থানান্তরিত হয়, সম্ভবত তাদের নেতা তাম্রধ্বজ সাহুকে মুখ্যমন্ত্রী করতে পারে কংগ্রেস তেমন প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। সিং দেওর মতো, তিনি নির্বাচনের পরে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন।
কিন্তু জাতপাতের বাইরে, সমতল জুড়ে, আরেকটি পরিচয় ছিল যা ২০১৮ সালের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বিষয় হয়েছিল। তা হল, ভোটাররা নিজেদের কৃষক হিসাবে দেখেছিল এবং ধান সংগ্রহের জন্য কংগ্রেসের উচ্চ ক্রয়মূল্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এবার, বিজেপি যে ক্রয় মূল্য দেয় তা কংগ্রেসের সঙ্গে মিলেছে, ফলে দলটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
এর সঙ্গে অন্য একটি ফ্যাক্টর এখানে কাজ করেছে। কংগ্রেসের তিনজন নেতা তিনটি ভিন্ন দিকে টানছে। এর ফলে দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা বিস্তৃত ওবিসি-উপজাতি জোট ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে।
উপরন্তু, বাঘেলের সরকার দুর্নীতির জন্য ‘খ্যাতি’ অর্জন করেছে, যা প্রচারের এনে বিজেপি লাভবান হয়েছে।
অন্যদিকে, কোনও মুখ সামনে রেখে নির্বাচনের প্রচারে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। এর ফলে গোষ্ঠী এবং বর্ণের নেতারা মনে করে দলটি ক্ষমতায় ফিরে গেলে তাদের সমান সুযোগ দেওয়া হবে।
বিজেপি বর্ণ জাত সুমারির ফাঁদে পড়েনি, যা জটিল সামাজিক সম্প্রদায়গুলিকে বিচ্ছিন্ন করার ঝুঁকি তৈরি করে। বিভিন্ন অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত বার্তা ছিল। এটা বাঘেলের সরকারের সঙ্গে তাদের পার্থক্য তৈরি করে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে দুর্নীতির বিরোধী প্রচার চালিয়েছেন তাও ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টার হয়েছে।
দীর্ঘ সময় তো দূরের কথা স্বল্প মেয়াদেও সরকারকে রক্ষা করার ক্ষেত্রেও কংগ্রেস যথেষ্টই দুর্বল।
কেবলমাত্র অফিসে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখা নয়, তুলনামূলক দ্রুত সময়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার ক্ষেত্রে বিজেপির রেকর্ড স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ছত্তিশগড়ে নির্বাচনের ফল তারই প্রমাণ।